দর্শকদের হতাশ করার কোনো ইভেন্ট অলিম্পিকে থাকলে বাংলাদেশের হয়ে তৌকীর আহমেদ যে গোল্ড মেডেল পেতেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। খানিক আগেই দেখে ফেললাম, ২০১৯ এ বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত ও প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র ‘ফাগুন হাওয়ায়’-এর ট্রেইলার।
বছর কয়েক আগের কথা, ভুল করে একটি মুভি দেখে, খুব ভালো লেগে গিয়েছিল। ভুল করে কেন বললাম, বলছি। সিনেমাটা দেখার উদ্দেশ্যে হলে যাইনি, কিন্তু যা দেখতে গিয়েছিলাম, তার টিকেট না পাওয়ায়, এটাই দেখলাম। আর তারপরই মনে হলো, এমন সিনেমার কথা কেন শুনিনি আগে? কয়দিন বাদে অনলাইনে বের হবার পর, সবাই দেখে ঠিক এই আফসোসটাই কিন্তু করেছিল। মুভি গ্রুপগুলোতে হিড়িক পড়ে গিয়েছিল রিভিউয়ের। তো এমন মুভি কেন অজ্ঞাত থাকবে।
ভাবলাম এটাই হয়তো প্রচার কৌশল। সিনেমার নামই অজ্ঞাতনামা। তাই পরিচালকও দর্শকদের কাছে সবকিছু ‘অজ্ঞাত’ রেখেই প্রচার করতে চেয়েছেন। ভালো লাগলো বিষয়টা। ইউনিক আইডিয়া।
কিন্তু কয়দিন পর দেখি পরিচালক আরও একটি চলচ্চিত্র মুক্তি দিচ্ছেন, নাম তার হালদা। ভাবছেন, নামের সাথে মিল রেখে গ্রাম গঞ্জের নদীর সাগর বা জেলে সম্প্রদায় নিয়ে বিচিত্র কোনো প্রচারণা হয়েছে?
উহু, এখানেও চমক। সবাইকে অবাক করে দিয়ে, অজ্ঞাতনামার মতোই প্রায় ‘অজ্ঞাত’ রেখে প্রচার করার পদ্ধতি বেছে নিলেন পরিচালক।
অবশেষে, এ বছর ফাগুন হাওয়ায় সিনেমাটির প্রচার দেখে বুঝলাম, ‘অজ্ঞাত’ এ প্রচার কৌশলই আসলে পছন্দ উনাদের। অ্যান্ড গেজ হোয়াট? এই সিনেমাটির প্রচারও চলছে, যথাসম্ভব সবকিছু ‘অজ্ঞাত’ রেখেই।
২০১৯ সালে এসেও একদম সাধারণ সিনেমা দর্শকদের কাছে তৌকীর আহমেদের অজ্ঞাতনামা একদমই ফ্রেশ মেমোরি। আর বছরের শেষ চমক ‘দহন’ খ্যাত সিয়াম এখন আছে তাঁর ক্যারিয়ারে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
তিশাও যথেষ্ট দর্শকনন্দিত অভিনেত্রী। এমন একটা সময়ে এসেও যদি, আর সবকিছু বাদ দিয়ে, শুধু ‘সিয়াম, তৌকীর আহমেদ, তিশা’ এই তিনটি নাম ব্যবহার করেও তো সবার মুখে মুখে থাকার কথা ‘ফাগুন হাওয়ায়’-এর নাম।
কিন্তু আসলেই কি এই সিনেমার সংশ্লিষ্টরা সেটা চান? আচ্ছা ধরেন, এই নাম দুটোও বাদ দিলাম।
ফাগুন হাওয়ায় মুক্তি পাচ্ছে ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে। সিনেমার কন্টেন্ট আমাদের ভাষা আন্দোলন রিলেটেড। তাহলে, ‘ভাষার মাসে, ভাষা আন্দোলনের সিনেমা’। এটাই কি যথেষ্ট নয়? প্রচার করার মত আর কি চাই?
দর্শকের কাজ কখনোই সিনেমার প্রচার করা না। অবশ্যই সিনেমা দেখে ভালো লাগলে, হল ফেরত দর্শক সিনেমার নাম বাকিদেরকেও জানাবে। কিন্তু, হলে যারা যাবে, তাঁদের কাছে কি আপনাদের সিনেমার নামটুকু পৌঁছে দিতে পেরেছেন?
সিনেমা নিয়েই আপনাদের কাজ, এটাই ধ্যান জ্ঞান। আশা করি, এসব ব্যাপারে একটু ভেবে দেখবেন।
আর এবার ট্রেইলারের ব্যাপারে আসা যাক। বর্তমান সময়ে সিনেমার ট্রেইলার খুব বড় একটা ইমপ্যাক্ট ফেলে। সাধারণত, ট্রেইলারে একটা বিজিএম থাকে, বিভিন্ন সিন আর ভোকাল সিনক্রোনাইজডভাবে থাকে। টিজারগুলো প্রমিজিং হলেও, ‘ফাগুন হাওয়ায়’-এর ট্রেইলার দেখে মনে হয়েছে এলোমেলোভাবে ইচ্ছে মতো বিভিন্ন সিন জোড়াতালি দিয়ে একটা ক্লিপ বানিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারেও, ভবিষ্যত প্রোজেক্টগুলোতে আরেকটু মনোযোগ আশা করছি।
শুরুতেই যে হতাশার কথা বলেছিলাম, তৌকীর আহমেদ স্যারের প্রতি অনুরোধ, আশাবাদী দর্শকদেরকে এভাবে হতাশ করবেন না প্লিজ। ফাগুন হাওয়ায় নিয়ে জল্পনা কল্পনা ও প্রত্যাশার সূচনা সেই গত বছর থেকে। পোস্টার রিলিজের পর তা বেড়ে যায় বহুগুণে। বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকরা এমনিতেই বলার মতো সিনেমা বছরের হাতে গোনা কয়েকটা পায়। সেখানে এতদিন ধরে অপেক্ষার পর হতাশ হওয়াটা একটু বেশিই দুঃখজনক। আমরা চাই না আর কোনো ‘অজ্ঞাতনাম’ অজ্ঞাত রয়ে যাক।
বলে রাখা ভালো, আমি কোনো ক্রিটিক নই। তেমন উচ্চমার্গীয় শ্রেণীর দর্শকও নই। কাজেই আমার বলা প্রতিটা কথাই একজন সাধারণ বাংলাদেশী দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে নেয়া। আর তাই মতের অমিল হতেই পারে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, আমার মতো সাধারণ বাংলাদেশী দর্শকদের সংখ্যাটাও নেহায়েত কম না। পয়সা খরচ করে সিনেমা দেখতে হলে যদি যেতে পারি, সে সিনেমা নিয়ে মন থেকে দু-চারটা কথা বলার অধিকারও আশা করি আমাদের আছে।
সবশেষে এতটুকুই বলবো, শুভকামনা রইলো, ভাষার মাসে, মাতৃভাষা প্রেমের সিনেমা ‘ফাগুন হাওয়ায়’-এর জন্য।