ওমর সানী: সেকালের আক্ষেপ, একালের সেলফিম্যান

‘আকাশেতে লক্ষ তারা, চাঁদ কিন্তু একটারে’ – আর সেই ‘চাঁদের আলো’ হয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে এসেছিলেন ঘাড় সমান চুল নিয়ে এক তাগড়া যুবক। অল্পদিনেই পেয়েছিলেন জনপ্রিয়তা, কিন্তু অভিনয়ে একটু বেশিই অপরিপক্ক।

বলা যায়, তারকা পরিবার থেকে এসেছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা তিন নায়িকা সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা সম্পর্কে তাঁর কেমন যেন ফুপু হন। মানে, ফিল্মের লাইনে ভালই পরিচয় ছিল তাঁর।

সেই নায়কের জনপ্রিয়তা দ্রুতই প্রতিফলিত হলো প্রিয়দর্শিনী খ্যাত নায়িকা মৌসুমীর স্পর্শে। কারণ, তিনি যে ‘দোলা’র ‘প্রথম প্রেম’। এই কপাল গুনেই হয়ে উঠলেন নব্বইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক। শোনা যায় – তখনকার পাড়ার ‘রংবাজ’রা চৌধুরী সাহেব বলে তাঁর চিৎকার ধ্বনি শুনে ভীষণ ‘লজ্জা’ পেতেন।

তিনি হলেন ওমর সানী। কারো চোখে তিনি সুপারস্টার, কারো চোখে কিছুই না, অভিনয় না জানার কারণে কারো চোখে তিনি আক্ষেপ। তবে, সব কিছুর ঊর্ধ্বে ওমর সানী বাংলা সিনেমায় একটা ‘ক্যারেকটার’ বটে।

ক্যারিয়ার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় বিয়েও করে ফেলেন (১৯৯৬ সালে) প্রিয়দর্শিনীকে, নিজেকে তিনি তুলনা করতেন নব্বইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়কের সঙ্গে। দর্শকদের চোখে নব্বইয়ের সবচেয়ে ওভাররেটেড নায়ক হয়ে গেলেন ভিলেন -সেটা হয়তো তিনি বুঝতে পেরে বিশাল দেহ নিয়ে নিজেই এবার দর্শকদের সামনে হাজির হলেন ভিলেন রুপে।

এক সময় যিনি নায়িকাদের সম্ভ্রম বাঁচাতেন, কালের প্রবাহে তিনিই একের পর এক নায়িকার সম্ভ্রম কেড়ে লাগলেন। কিন্তু, সম্ভ্রম বাঁচানো, বা সম্ভ্রম কাড়া  – কোনোটাতেই তাঁকে ‘সুপারস্টার’ খেতাব দেওয়া যায় না। অভিষেক বচ্চন যেমন বলিউডে নিজের কাজের চেয়ে অমিতাভ বচ্চনের ছেলে কিংবা ঐশ্বরিয়া রায়ের স্বামী নামেই বেশি পরিচিত, ওমর সানীর ক্ষেত্রেও এখন সেই একই কথা খাঁটে।

নায়ক, ভিলেন হয়ে যখন সফল হলেন না, তখন তিনি আসলেন সেলফিম্যান হয়ে। ফেসবুকের সুবাদে এই যাত্রায় তিনি বেশ সফল। এফডিসি থেকে নায়িকাদের বাসা সবখানেই তিনি সেলফি তোলায় ব্যস্ত, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাইভ। আজকাল ‘আত্ম অহংকার’ করতে বেশ পছন্দ করেন, যতই সেটা ভুল তথ্য দিয়েই হোক না কেন!

নায়ক হিসেবে ওমর সানীর খুব আহামরী কোনো কাজ নেই বললেই চলে। এর মধ্য থেকেও অবশ্য চাঁদের আলো (১৯৯২), মহৎ (১৯৯৩), প্রেমগীত (১৯৯৩), মুক্তির সংগ্রাম (১৯৯৫),হারানো প্রেম (১৯৯৬), কে অপরাধী (১৯৯৭), কুলি (১৯৯৭), বাপের টাকা (১৯৯৮),অধিকার চাই (১৯৯৮), মধুর মিলন (১৯৯৮) – ইত্যাদি ছবির কথা না বললেই নয়।

খুব বেশি প্রতিভা নিয়ে তিনি ঢালিউডে আসেননি। তবে, বিস্তর সুযোগ পেয়েছিলেন। অভিনয়টা ঠিকঠাক মত শিখে ফেলতে পারলেই হয়তো তিনি কিংবদন্তিদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলতে পারতেন। আরেকটা সমস্যা হল বয়স ৩৫ পার হওয়ার পর আর তালই মেলাতে পারেননি সানী। ওই সময় রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, আমিন খানরা চলে এসেছেন।

আর শরীরে প্রচুর মেদ জমিয়ে ফেলেছিলেন, যার থেকে আজো তাঁর মুক্তি মেলেনি। সেটা এতটাই যে সেলফিম্যান সেলফিতেও নিজের মেদটা ঢাকতে পারেন না তিনি, যেমন পর্দায় নিজের অভিনয় না জানার ব্যাপারটা ঢাকতে পারেন না!

সর্বশেষ