ভারতের জাতীয় নির্বাচন কি নিয়ে আসলো আমাদের জন্য? চলুন, এটা বোঝার আগে ফলাফলটা বুঝে নেই।
এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে জিতেছে বিজেপি, আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি!
এবার বিজেপি আরও এক কাঠি সরেস, সব জায়গাতে-ই একচ্ছত্র আধিপত্য! নোট বাতিল, গো রক্ষা আন্দোলন, দুর্নীতি, বাংলাদেশি হঠাও বা মুসলমান হঠাও কোন কিছুই আটকাতে পারেনি বেনারসের এমপি নরেন্দ্র মোদিকে! বোঝা গেল ‘মোদি-ফাইড’ ইন্ডিয়াকেই ‘বেটার ইন্ডিয়া’ হিসেবে দেখছেন ভারতের নাগরিকরা।
উত্তরপ্রদেশকে ধরা হয় ভারতের আসল লড়াইয়ের স্থান। সবচেয়ে বেশি আশিটি সংসদীয় আসন আছে এই কেন্দ্রে।
বেনারস ও আমেথি দুটোর অবস্থান এ রাজ্যে। নরেন্দ্র মোদি বেনারস থেকে, রাহুল গান্ধী আমেথি থেকে নির্বাচন করেছেন।
মোদি সাহেব জিতেছেন, আর নিজের হোমগ্রাউন্ড থেকে রাহুল সাহেব স্মৃতি ইরানীর কাছে হেরেছেন! নিজের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে প্রচারণায় নামিয়েও লাভ হয়নি কোন।
এখন নাকি সোনিয়া গান্ধী তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে দরজায় খিল দিয়েছেন। খিল দিয়ে ছেলে মেয়ে দুটোকে আচ্ছা মতো ঝেড়ে দিচ্ছেন। এ যেন মামলায় হেরে গিয়ে উকিল সাজার মত ঘটনা!
অবশ্য, বুথফেরত সমীক্ষাগুলোতেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল, আবারও ক্ষমতার চেয়ারে বসতে চলেছেন মোদি।
জনগনই বা কেন কংগ্রেসকে পছন্দ করবে, বিরোধীপক্ষ তো এটাই ঠিক করতে পারলো না যে, মোদির পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী হবেন টা কে! জোট-মহাজোট কোথাও হলো, কোথাও আবার হলো না!
মোদী সাহেব আবার পাকিস্তান কে হটিয়ে দিয়েছেন, বা বালাকোটে লড়াইয়ে এয়ার ফোর্সের কাহিনী ঘটিয়ে বা রটিয়ে জনগনের মন ভালই জয় করে নিয়েছেন!
পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনের সবগুলোই তৃণমূল জিতবে বলে সবসময় মমতা বলে আসছেন। আর কথায় কথায় মোদীকে চোর, বাটপার, মিথ্যেবাদী বলে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার দখল করে নিবেন বলে হুমকি ধামকি অনবরত দিয়েছেন!
তো, ফলাফল কি দাড়ালো?
আগের নির্বাচনে এই প্রদেশ থেকে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র দুই আসন, আর এবার পুরোপুরি উল্টো চিত্র! তৃণমূলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে বিজেপি, আঠারোটা আসন নিশ্চিত হয়ে গেছে এরমধ্যে।
তৃণমূল এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্ত সেটা কতদিন টিকবে দেখার বিষয়। মমতার মমতাময় ভেলকি এখন কি করে সেটার উপর দৃষ্টি থাকবে সবার!
দিল্লিতেও ওই একই অবস্থা, আম-আদমী কংগ্রেস কিছুই করতে পারিনি, যা করার সবই করেছে বিজেপি!
ইতিমধ্যে ভারতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো লোকসভা নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়ায় বিজেপির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। পাশাপাশি, মোদির সঙ্গে যে আদর্শিক লড়াই তার চলে আসছে, তা একইভাবে চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কেন সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মান্ধতাকেই বেছে নিলো ভারতের মানুষ, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন! বাসে গণধর্ষন, সীমান্তে লাশ ফেলা, গোরক্ষা আন্দোলনের নামে মুসলমানের উপর নির্যাতন, কিংবা বাংলাদেশি হঠাও বলে ভারতীয় মুসলমানদের পুশ ইন করাটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র – এই জাতীয় নিন্দা ও তর্ক-বিতর্ক মোদিকে ঘিরে আরো বাড়বে, নাকি তিনি সত্যিকার অর্থেই ভারতকে ‘বেটার ইন্ডিয়া’ বানাবেন? – এসব জল্পনা কল্পনার শেষ দেখার জন্য সময়ের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই!
তবে, এই সবের মাঝে সবচাইতে খুশি নি:সন্দেহে বিবেক ওবেরয়। কারণ, নির্বাচন শেষে তাঁর অভিনীত নরেন্দ্র মোদির বায়োপিক ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’ বেশ ক’দিন ঝুলে থাকার পর মুক্তি পেয়ে গেছে।