সিনেমা বানানো সহজ কাজ নয়। শতাধিক লোককে দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটা কাজ করিয়ে নেওয়া সত্যিই অনেক ঝামেলার। তাই এতকিছুর ভিড়ে অনেক সতর্কতার পরেও সিনেমাতে ছোটখাট কিছু ভুল রয়েই যায়। আজকে তেমনি কিছু বিখ্যাত সিনেমার মধ্যেকার কয়েকটা ভুলের কথা আলোচনা করব।
লাগান আমির খানের ক্যারিয়ারের এক অন্যতম মাইলফলক এবং হিন্দি সিনেমারও।
মিস্টার পারফেকশনিস্ট বলে খ্যাত আমির খান তার সব সিনেমা নিখুঁত চাইলেও সূক্ষ্ম কিছু ভুল তো রয়েই যায়। যেমন,১৮৯২ সালের পটভুমিতে বানানো এই সিনেমাটিতে ছয় বলে এক ওভার করে দেখানো হয়।কিন্তু ১৮৯২ সালের সময়কার ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলায় পাঁচ বলে এক ওভার হিসেবে খেলা হত।
জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা সিনেমাটি কাহিনীর ভিন্নতার জন্য দর্শকদের কাছে অনেক সমাদৃত হয়েছিল।
সিনেমার এক দৃশ্যে ঋত্বিক রোশন তার বন্ধুদের সাথে স্পেন থেকে চলে আসার সময় নায়িকা ক্যাটরিনা তার সাথে দেখা করতে যায় মোটরবাইক নিয়ে।যখন ক্যাটরিনা মোটরবাইকটি নিয়ে যাচ্ছিল তখন তার গায়ে ছিল গোলাপী রঙের টপস,কিন্তু ঋত্বিকের সাথে দেখা হওয়ার সময় সেটির রং বদলে হয়ে যায় মেরুন।
শাহরুখ খান এবং রোহিত শেঠির অ্যাকশন-কমেডি সিনেমা চেন্নাই এক্সপ্রেস।
সিনেমাটি রাহুলের দাদা মারা যায় এবং রাহুলকে তার ‘দাদার অস্থি’ নিতে দেখা যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আবার দাদীমা এসে তাকে কেন যে ‘দাদার অস্থি’ দেন সেটা আমার মাথায় ঢুকেনি।
পেয়ার কি পাঞ্চনামা নামক রোমান্টিক কমেডি সিনেমাটি স্বল্প বাজেটে নির্মিত হলেও মোটামুটি ভাবে সফল হয়েছিল বক্স অফিসে।
সিনেমার শুরুতে তিনবন্ধুকে দেখা যায় মটরবাইকে করে ‘ধাবা’ তে যেতে।কিন্তু পরবর্তীতে ‘ধাবা’ থেকে ফিরে আসার সময় তারা মনে হয় জাদুর সাহায্যে মোটরবাইক গুলিকে জিপগাড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন।
পিকে সিনেমাটি হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসা সফল সিনেমার মধ্যে অন্যতম,কাহিনীধারায় অভিনবত্ব এবং আমির খানের অভিনয় একে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল।
সেখানে সরফরাজ বান্ধবী জাগগুকে বলে যে সে ব্রাগ-এর পাকিস্তানী দূতাবাসে চাকরি করে। কিন্তু পাকিস্তানী দূতাবাস ব্রাগে নয় বরং ব্রাসেলসে আছে।
এরপরে আরেকটি দৃশ্যে সঞ্জয় দত্তকে ১২২৯০ নাম্বার ট্রেনে করে দুরন্ত এক্সপ্রেস দিয়ে দিল্লীতে আসতে দেখা যায়, বাস্তবে এই ট্রেনটি মুম্বাই থেকে নাগপুরে চলাচল করে।
গুন্ডা সিনেমায় মিঠুন চক্রবর্তীর অনবদ্য অভিনয় এখনো সিনেমাপ্রেমীদের মনে লেগে আছে,তারপরেও একটা দৃশ্যে মিঠুনের সাইকেল চালিয়ে বুলেটের গতিকে পেছনে ফেলাটা সত্যিই একটু বাড়াবাড়ি।
বলিউডে সাই-ফাই টাইপের সিনেমা তেমন হয় না,শাহরুখ খানের রা ওয়ান সিনেমার মাধ্যমে এই ধারাটি মোটামুটি শক্ত অবস্থান পায়।
রা ওয়ান সিনেমায় ছোটখাট ভুল থাকলেও দক্ষিণ ভারতীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী শাহরুখের চরিত্রকে মৃত্যুর পরে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করাটা একটু বেশিই দৃষ্টিকটু।
মিলখা সিংকে নিয়ে বানানো আত্মজীবনীমুলক ভাগ মিলখা ভাগ সিনেমাটি তার নির্মাণশৈলী এবং ফারহানের অভিনয়ের জন্য প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু সিনেমার পরিচালক যদি ইতিহাসের দিকে একটু নজর দিতেন তবে ১৯৫০ সালের দৃশ্যে মিলখার মুখে ‘নান্না মুন্না রাহি হু’ গানের গুনগুনানি শুনতে হত না।
এই ‘নান্না মুন্না রাহি হু’ গানটি বিখ্যাত সিনেমা ‘সন অব ইন্ডিয়া’ থেকে নেওয়া,যা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬২ সালে।
ভিনগ্রহের আগন্তুককে নিয়ে বানানো কোই মিল গ্যায়া সিনেমার সিক্যুয়েল ছিল কৃষ।
সেখানে ঋত্বিক রোশন বা রোহিতকে দেখা যায় দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন এবং প্রীতি জিনতা ভারতে। এখন প্রীতি কিভাবে সন্তান সম্ভবা হয়ে যান হঠাৎ করে? ব্যাপারটা একটু গোলমেলে না?
তবে এসব ছোটখাট ভুল থাকার পরেও সফল হয়েছিল সবগুলো সিনেমাই।
– লাফিং কালার্স অবলম্বনে