চার বছরের শিশু তোবা মায়ের লাশের কাছে গিয়ে কথাটি বলছিল। মা যেখানে যাবে তোবাও সেখানে যাবে। সবসুময় তো সে তাই দেখে এসেছে, মা তাঁর সব। তাহলে এখন কেন সে মায়ের কাছে যেতে পারছে না!
মৃত্যু, লাশ, ছেলেধরা, সন্দেহ, গনপিটুনি ছোট্ট তোবা এসবের কিছু বুঝে না। সারা বাড়ি ঘুরে সে কেবল মাকে খুঁজে ফিরে। মা ফিরে আসে না। রেনু আর কোনদিন ফিরবে না। তোবার মাকে হত্যা করা হয়েছে। শত মানুষ উৎসবের আনন্দে হত্যা করেছে তোবার মা রেনুকে।
‘ছেলেধরা সন্দেহে’ উত্তর বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে রেনুকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনা হয়। নারী পুরুষ সম্মিলিত ভাবে রেনুকে আঘাতের পর আঘাত করা হয়। কেউ চুল টেনে ছিঁড়ে, কেউ বুকে লাথি দেয়, কেউ সুযোগে গোপন জায়গায় হাতিয়ে নেয়।
হাতে মারলে নিজের হাতে ব্যাথা লাগে, তাই লাঠি চলে আসে। লাঠির আঘাতে রেনুকে হত্যা করা হয়। ভিডিও ক্যামেরা বের করে কেউ কেউ ছবি তুলে, ভিডিও বানায়। ফেসবুক ইউটিউবে লাইক শেয়ার। আহা সুখ।
নির্মমভাবে নিরপরাধ রেনু হত্যা একটি মাত্র শব্দে জাস্টিফাইড হয়ে গেল, ‘গনপিটুনি’!
এই দেশে গনপিটুনির যেন বিচার নেই। চোর পিটানো এ দেশে জায়েজ, তাই সন্দেহের বশে পিটিয়ে রেনুকে হত্যাও তাঁরা জায়েজ করে নিল। শত মানুষের সম্মতিতে কয়েক মিনিটে ফুর্তি মুডে কয়েকজন মানুষ পিটিয়ে একজন মানুষকে হত্যা করে বাড়ি ফিরে ফ্যান ছেড়ে আরামসে ভাত খেতে খেতে পরিবারের কাছে সেই হত্যায় নিজের অংশগ্রহণের বীরত্ব বর্ননা করল।
রক্তের দাগ নিয়েই তাঁরা ভাত মাখায়। ভাত খাইয়ে দেয় তাদের সন্তানদের।
রেনুর দুই ছেলে মেয়ে, যে স্কুলে রেনুকে হত্যা করা হয়, সেই একই স্কুলে রেনুর বড় ছেলে পড়াশুনা করেছে। ছেলে এখন বাবার কাছে থাকে। রেনু তাঁর মেয়ে তোবাকে নিয়ে থাকত, মা মেয়ের দুজনের সংসার। সংসার চলত রেনুর টিউশনির টাকায়।
রেনুকে লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়ি দাফন করা হয়েছে।
তোবা মা খুঁজে। পায় না। কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।
হিংস্র মানুষগুলো জেগে থাকে, ‘গনপিটুনির’ আড়ালে নতুন আরেকটি হত্যার নেশায়। ওদের হাতে রক্তের দাগ। এ দাগ সহজে মিটিবে না।
মানুষগুলো আপনি, আপনারা, আমরা!