তিনি এসেছিলেন রাজত্ব করতে

প্রেমে পড়েছে মন,প্রেমে পড়েছে

অচেনা এক মানুষ আমায় পাগল করেছে

২০০৫ সালের কথা। ‘রং নাম্বার’ সিনেমায় এই এক গান দিয়েই বাজিমাৎ করেছিলেন তৎকালীন সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী। প্রথম ছবির ব্যাপক সাড়ার পর, অবশ্য আর তাকে ছবিতে দেখা যায় নি। টিভি নাটকেই ছিল তখন সব ব্যস্ততা, বাংলা নাটকে তিনি যেন সমুজ্জ্বল সন্ধ্যাতারা।

এলেন, দেখলেন, জয় করলেন, আবার চলেও গেলেন – এই কথাটা তাঁর ক্ষেত্রেই যেন খাটে। এত অল্প সময়ে কোনো টিভি অভিনেত্রী জনপ্রিয়তা পান নি। আবার কেউ জনপ্রিয়তা পেয়ে এত দ্রুত অনিয়মিত ও হয়ে যান নি। স্বল্পকালীনের জনপ্রিয়তায় তিনি রয়ে গেলেন দর্শকদের মাঝে। তিনি নাট্যঙ্গনের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী।

পুরো নাম ইপশিতা শবনম শ্রাবন্তী। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক জগতের সাথে পরিচিত। খুব সম্ভবত প্রথম নজর কাড়েন হেনোলাক্সের বিজ্ঞাপন দিয়ে। ইত্যাদির গানে মডেল হওয়ার সুবাদেও বেশ পরিচিতি আছে। বিজ্ঞাপনে এই লাস্যময়ী তারকা কে দেখে অনেকেই তখন মুগ্ধ হয়েছে। রীতিমত তিনি হয়ে উঠেন এক আলোচিত নাম।

এরপর নাম লিখালেন অভিনয়ে। বিটিভিতে ‘পাথরে জলপ্রপাত’ এর পর ২০০৩ সালে ফারুকীর অতি জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘৫১ বর্তী’ তে ছোট মেয়ের চরিত্রে চমকপ্রদ অভিনয় করে তিনি জানান দেন তিনি এসেছেন রাজত্ব করতে।

শ্রাবন্তী তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভালো সময় কাটান ২০০৪ সালে। বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই ধারাবাহিক নাটক নুরুল হুদা একদা ভালোবেসেছিল ও জোছনার ফুলের প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করে হয়ে উঠেছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী।

এছাড়া হৃদয়ের একুল ওকুল, অনুর একদিন, বাড়ির নাম শান্তিকুঞ্জ, অপু দ্য গ্রেইট, বহুরুপী, ভাতঘুম, গোলাপ কেন কালো, তুলিতে আঁকা স্বপ্ন, ট্রাইএঙ্গেল, হাসি বাড়ি কান্না বাড়ি, সুইট ফ্যামিলি-সহ আরো বেশিকিছু সমসাময়িক কিছু নাটকে অভিনয় করেন। ইউরো লেমনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছিল।

টিভি নাটকে যখন ব্যস্ত অভিনেত্রী, তখনই নাম লেখান চলচ্চিত্রে। রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেন ‘রং নাম্বার’ সিনেমায়। এরপর কিছুটা ম্লান হতে থাকেন,আবার আলোচনায় আসেন বন্ধু এবং ভালোবাসা, তোমার জন্য, নীড়, স্বপ্নচূড়া, মনোবীক্ষণ যন্ত্র, লাল টি শার্ট নাটক দিয়ে। এরপরই একেবারেই অনিয়মিত হয়ে গেছেন। সর্বশেষ নাটক ২০১০ সালে ‘ডালিম কুমার’।

টিভি নাটকের এই উজ্জ্বল তারকা জুটি বেঁধে সফল হয়েছিলেন মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে। শাহেদের সঙ্গেও আলোচনায় ছিলেন। এছাড়া রিয়াজের সঙ্গেও একটা দারুণ জুটি গড়ে উঠেছিল। এই স্বল্প কালীন জনপ্রিয়তায় ও পেয়েছিলেন দর্শক জরিপে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার সহ বহু পুরস্কার।

২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক খোরশেদ আলমের সঙ্গে। বলা যেতে পারে তাঁর বিয়ে, সংসারের কারনেই টেলিভিশন পর্দায় দেখা যায় নি! আর কখনো দেখা যাবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই!

টেলিভিশনের এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘বাচ্চা রেখে কোথাও গিয়ে শ্যুটিং করতে ভালো লাগে না। আমি পারি না। কাজ করাটা কমিটমেন্টের ব্যাপার। কারও সঙ্গে ফাজলামি করতে পারব না। পরে দু-একটা কাজ করতে পারি, তবে তা নিশ্চিত নয়।’

এখন সংসার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন শ্রাবন্তী। ব্যক্তিজীবনে এই মুহুর্তে একটা সংকটময় জীবন পার করছেন। সংসারে চলছে টানাপোড়েন। আশা করি এই সংকটের অতি দ্রুতই উত্তরণ ঘটবে।

সর্বশেষ