ঢালিউডের জন্য ২০১৯ সাল ছিল দারুণ এক দু:সময়। মাত্র একটি ছবি সাফল্য পায় এ বছর। বাকিগুলো হতাশ করে সকলকে। স্বভাবতই ঢালিউডে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাননি কোন নায়িকা। তবে আলোচনায় ছিলেন কয়েকজন।
- জয়া আহসান
দুই বাংলার নন্দিত অভিনেত্রী জয়া আহসান। গেল বছর বাজিমাত করেছিলেন ‘দেবী’ চলচ্চিত্র দিয়ে। এ বছর তিনি আমদানি হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে কৌশিক গাঙ্গুলীর ‘বিসর্জন’ ও বছরের শেষের দিকে নভেম্বরে শিবপ্রসাদ – নন্দিতার ‘কণ্ঠ’ আমদানি চুক্তিতে মুক্তি পায় বাংলাদেশে। দুটো ছবিতেই জয়ার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু ছবি দুটি কোন ব্যবসা করতে পারেনি।
চলতি বছরই তিনি কাজ শেষ করেছেন আহমদ ছফার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘অলাতচক্র’। অন্যদিকে জয়া এ বছর ‘দেবী’ চলচ্চিত্রের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। মেরিল প্রথম আলো, বাচসাস, বাবিসাস, ভারত – বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি। কলকাতায় চুটিয়ে কাজ করেছেন তিনি, আলোচনায় ছিলেন সেজন্যও। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূতও ছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও জয়া ছিলেন কাঙ্ক্ষিত একজন তারকা।
- আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী
দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে ঢালিউড রাঙাচ্ছেন প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী মৌসুমী। এ বছর তার তিনটি ছবি (রাত্রির যাত্রী, লিডার, নোলক) মুক্তি পায়। ‘নোলক’ কিছু সাফল্য পেলেও বাকি দুটো মুখ সফল হয়নি। কিন্তু মৌসুমী আলোচনায় ছিলেন সারা বছর। রোজার ঈদে রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন তিনি। বছরের শেষ দিকে আত্মপ্রকাশ করেছেন রেডিও জকি হিসেবে। তবে মৌসুমীর চমক ছিল শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এককভাবে প্রার্থী হয়ে।
নানা প্রতিকূলতার মাঝেও মিশা সওদাগরের বিপরীতে সভাপতি পদে নির্বাচন করেন মৌসুমী। নির্বাচনের প্রচারণায় নানান ইস্যুর মুখোমুখি হয়েও অবিচল ছিলেন তিনি। মৌসুমী জয় পেলে সৃষ্টি হতো ইতিহাস। তা না হলেও তার এ পদক্ষেপ নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে ভবিষ্যতে।
এছাড়াও মৌসুমীকে দেখা গেছে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ – ২০১৯’ এর বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে। চলতি বছর তিনি মুক্তিযুদ্ধের আলোকে নির্মিতব্য ছবি ‘অর্জন – ৭১’ এ যুক্ত হয়েছেন। শুটিংও করেছেন কিছুটা। সামাজিক কাজেও সরব ছিলেন তিনি সারা বছর। তাই বলাই যায় ক্যারিয়ারের এ সময়ে এসেও আলোচনায় ছিলেন প্রিয়দর্শিনী স্বমহিমায়।
- শবনম বুবলী
চলতি সময়ে একাধিক ব্যবসা সফল ছবির একমাত্র নায়িকা শবনম ইয়াসমিন বুবলী। এ বছরের একমাত্র হিট ছবি ‘পাসওয়ার্ড’-এর নায়িকা তিনি। কিন্তু তিনি প্রশংসিত হয়েছেন ‘মনের মত মানুষ পাইলাম না’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। শাকিব খানের নায়িকা ট্যাগ লেগে যাওয়া বুবলী চমক দেখিয়েছেন সৈকত নাসিরের ‘ক্যাসিনো’ ছবিতে যুক্ত হয়ে। এ ছবিতে তার বিপরীতে দেখা যাবে চিত্রনায়ক নিরবকে। আবার সকল গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে কাজী হায়াৎ – এর ৫০তম ছবি ‘বীর’-এর শুটিং শুরু করেছেন। সার্বিক বিবেচনায় বুবলী বছরজুড়েই ছিলেন আলোচিত।
- ইয়ামিন হক ববি
চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববির দুটো ছবি মুক্তি পায় এ বছর। ছবিগুলো হলো সাকিব সনেটের ‘নোলক’ ও রাজা চন্দের ‘বেপরোয়া’। শাকিব খানের বিপরীতে ‘নোলক’ ছবিটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল প্রচুর। ছবিটি মুক্তির আগমুহুর্তে বাবাকে হারান ববি। শোককে শক্তিতে পরিণত করেই ছবির প্রচারণায় নামেন তিনি। অন্যদিকে দীর্ঘসূত্রিতার পর মুক্তি পাওয়া ‘বেপরোয়া’ যখন প্রেক্ষাগৃহে তখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি।
এবারও দৃঢ় মনোবলে ভর করে এগিয়ে চলেন ববি। চলতি বছর কলকাতায় মুক্তি পায় ববি অভিনীত ‘রক্তমুখি নীলা’। চলচ্চিত্র প্রযোজক – পরিবেশক সমিতির নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভও করেন তিনি। সবমিলিয়ে ববির জন্য বছরটি ছিল ঘটনাবহুল।
- পরীমনি
চলতি বছর অনিন্দ্য সুন্দরী নায়িকা পরীমনির একটি ছবি (আমার প্রেম আমার প্রিয়া) মুক্তি পেলেও তা সফল হয়নি। তবুও পরী ছিলেন আলোচনায়। ভালোবাসা দিবসে প্রেমিককে বিয়ের ঘোষণা দিলেও ভেঙে যায় পরীর বাগদান। এনিয়ে খবরে ছিলেন তিনি। নন্দিত নাট্য নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর প্রথম ছবি ‘বিশ্বসুন্দরী’ – তে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চমক দেখান পরী। ছবির পোস্টার ও গানে পরীর সপ্রতিভ উপস্থিতি নজর কেড়েছে সকলের।
চলতি বছরই জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারূকীর সহকারি রূপে আবির্ভাব ঘটে পরীর। বিএফডিসিতে পশু কোরবানি দিয়ে বরাবরের মতোই প্রশংসিত হন তিনি। ‘ফেয়ার অ্যাণ্ড লাভলী’র শুভেচ্ছা দূত পরীর ছবিতে ছেয়ে যায় সারাদেশ। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত আকর্ষণীয় ছবি প্রকাশ করে দর্শকের নজর কেড়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে পর্দায় না থেকেও আলোচনায় ছিলেন এ লাস্যময়ী।
উল্লেখিত পাঁচ চিত্রনায়িকার বাইরেও এ বছরের বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় ছিলেন পূর্ণিমা, পপি ও নিপুণ। নুসরাত ফারিয়াও বিনোদন পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন কাজের সূত্রে। নুসরাত ইমরোজ তিশা (ফাগুন হাওয়ায়, মায়াবতী, ইতি তোমারই ঢাকা) প্রশংসিত হয়েছেন তার অভিনয়ে।
বড়পর্দায় অভিষেক হওয়া অর্চিতা স্পর্শিয়া (অনন্য মামুনের ‘আবার বসন্ত’) ও সুনেরাহ বিনতে কামালও (তানিম রহমান অংশুর ‘ন’ডরাই’) ছিলেন দর্শকের আলোচনায়। বিদ্যা সিনহা মিমের একমাত্র ছবি ‘সাপলুডু’ প্রশংসা পেলেও ব্যবসা করতে পারেনি। মিম টুকটাক কাজ করে গেলেও প্রত্যাশামাফিক আলোচিত হননি এ বছর। নতুন বছর সকলের জন্য সাফল্যের বার্তা বয়ে আনবে এ প্রত্যাশা।