আই অ্যাম ববি। মুঝসে দোস্তি কারোগে?
পুরো ভারত বর্ষ ববি’র ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করেছিল ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে।
তারুণ্য নির্ভর এক প্রেমের গল্প। বড় লোকের দুলাল রাজ, বয়স ১৮। হিন্দু পরিবারের ছেলে রাজের বাবা বিরাট ব্যবসায়ী। আর মধ্যবিত্ত খ্রিষ্টান পরিবারের মেয়ে ববি। মেয়েটি একাধারে তেজী, নিষ্পাপ ও আবেদনময়ী। অসম প্রেমের মসলাদার ছবি। সাথে বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে ছিল লক্ষ্মীকান্ত আর পেয়ারেলালের গান।
মূল দু’টি চরিত্রে ঋষি কাপুর আর ডিম্পল কাপাডিয়া। মটরবাইকে দু’জনের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যটা লেখা হয়ে আছে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের পাতায়। দু’জনের রসায়ন পর্দায় এতটাই জমে গিয়েছিল যে, ছবি হিট হওয়ার পরই দু’জনের প্রেমের খবর রটে গিয়েছিল। ডিম্পল যতদিন না রাজেশ খান্নাকে বিয়ে করেন, তার আগ পর্যন্ত এই বিষয়ক গসিপ শোনা গেছে বিস্তর।
ছবিটির নির্মাতা ভারতের ‘শো-ম্যান’ খ্যাত রাজ কাপুর। ছবিটি নির্মানের বিরাট একটা প্রেক্ষাপটও আছে। ৭০-এর দশকের শুরুর দিককার কথা। ‘মেরা নাম জোকার’ কর রাজ কাপুরের বিরাট আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। কারণ, ছবিটা দিয়ে শিশুশিল্পী হিসেবে ‘চিন্টু জি’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে গেলেও, বক্স অফিসে ছবিটা একেবারেই চলেনি।
রাজ কাপুরের তাই দেনা মেটানোর জন্য হলেও একটা হিট ছবি দরকার ছিল। তিনি তারুণ্যের প্রেম নির্ভর ছবি বানালেন ডিম্পল কাপাডিয়া আর ঋষি কাপুরকে নিয়ে। ‘ববি’ বিরাট সাফল্য পেল। তাতে রাজ কাপুরের কেবল দেনাই মিটলো না, বিরাট লাভও হল।
ছবিতে ঋষি কাপুরকে কিভাবে কাস্ট করা হল, সেই ঘটনার বিবরণ প্রয়াত এই অভিনেতা এক সাক্ষাৎকারে দিয়েছিলেন, ‘আমি তখন স্কুলে পড়তাম। বাবা এসে মাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি ছবিটা করতে পারবো কি না। আমি যখন শুনলাম এতটাই রোমাঞ্চিত ছিলাম যে ঘরে নিয়ে নিজের অটোগ্রাফ প্র্যাকটিস করা শুরু করলাম।’
এই ছবি ভারতীয় দর্শকের রুচির বিরাট এক পরিবর্তন এনেছিল। শাহরুখ খান একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ভারতীয় সিনেমা এর আগে ছিল নারী-পুরুষ কেন্দ্রীক, ববি মুক্তি পাওয়ার পর সেটা হয়ে গেল ছেলে-মেয়েদের ব্যাপার।’
ববি দিয়ে যে রোম্যান্টিক চকোলেট হিরো’র তকমা ঋষি কাপুর পেয়েছিলেন, সেটা আজীবন তাঁর নামের সাথে জুড়ে ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি বিরাট এক তারকা বনে গিয়েছিলাম। হুট করেই যেন আমার চালচলন-আচরণ পাল্টে যায়।’
ববি সেকালে একটা বিস্ময় ছিল। ৭০ দশকের অন্যতম হিট ছবি এটা। ওই আমলে খোদ নিউ ইয়র্ক টাইমস এই ছবির ওপর প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল। লিখেছিল, ‘নতুন দুই তারকা, গল্পের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অনেকগুলো গান, সমাজবাদ, তরুণ প্রজন্মে কাছে টানার কৌশল, কিছু আবেদনময় ঘনিষ্ট দৃশ্য, অ্যাকশন – তিন ঘণ্টার জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।’
‘ববি’ কেবল সুপারহিট ছবিই ছিল না, ছবিটা পপ কালচার ও সিনেমা নির্মানে যুগান্তকারী কিছু পরিবর্তন এনেছিল। ওই সময় ঋষি আর ডিম্পল কাপাডিয়ার ফ্যাশন অনুকরণ করতো তরুণ প্রজন্ম। রক্ত দিয়ে প্রেম পত্র লেখার ঐতিহ্যও তখন থেকে শুরু হয়। ছবির নির্মান চলাকালে অভূতপূর্ব এক ঘটনা ঘটে। পরিচালক ছিলেন ঋষির বাবা রাজকাপুর।
তিনি গানের দৃশ্যায়নের ছেলেকে বলেছিলেন, ‘গানের সাথে শুধু ঠোঁট মেলাবে না। জোরে জোরে গান গাইবে।’ ঋষি বিরক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন। এজন্যই তো ছবি দেখে মনে হয়েছিল যেন ঋষি আক্ষরিক অর্থেই গানগুলো নিজে গাইছেন। এরপর এমন ঘটনা আরো অনেক ছবির সেটেই ঘটে।
একই বছর মুক্তি পায় ‘জাঞ্জির’। এই ছবি দিয়ে ‘অ্যাঙরি ইয়ং ম্যান’-এর তকমা পান অমিতাভ বচ্চন। অ্যাঙরি হিরো আর রোমান্টিক চকোলেট হিরোর প্রথম রাউন্ডে জয়টা ভালবাসারই হয়েছিল!