একটা ভাল সিনেমার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার হল ভাল একটা স্ক্রিপ্ট। মানুষ সিনেমার সাফল্যের জন্য সব সময় আমাকেই বেশি ক্রেডিট দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে আমি খুব কম সিনেমাই নিজের জন্য লিখেছি। রাজকুমার হিরানি যখন ‘পিকে’ করলো, কিংবা ‘থ্রি ইডিয়টস’ করলো, অথবা আশুতোষ যখন ‘লগন’ লিখলো, আবার আমোল গুপ্তে যখন ‘তারে জামিন পার’ লিখলো, সবই শুরু হয়েছে একটি নির্দিষ্ট মানুষের মস্তিষ্কে। প্রতিটি সিনেমারই ভাবনাগুলো খুব সুন্দর।
আপনি যখন একটা সিনেমা বানাবেন, তখন সবার আগে ভাববেন স্ক্রিপ্ট নিয়ে। এখানে যদি কোনো ভুল করে ফেলেন, সামনের রাস্তাটা খুব কঠিন হয়ে যায়।
তবে, কেবল স্ক্রিপ্ট দিয়ে সিনেমার গল্প যাচাই করা ঠিক না। গল্প থেকে স্ক্রিনপ্লে দূরত্বটা আকাশ থেকে পাতালের সমান। গল্পটা আপনার পছন্দ হোক কিংবা না হোক, তাঁকে যাচাই করতে যাবেন না। আমি ‘লগন’-এর গল্পটা আশুতোষের (গোয়ারিকর) কাছ থেকে প্রথম পাঁচ মিনিট শুনেই বাতিল করে দিয়েছিলাম।
১৮৯৫ সালের গল্প। কোনো বৃষ্টি হয় না। লোকে খাজনা দিতে পারে না। এই অবস্থায় ইংলিশদের বিপক্ষে একটা ক্রিকেট ম্যাচ হবে, খাজনা বাতিলের জন্য। এতটুকু শুনে বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, ‘এটা কেমন উদ্ভট ভাবনা!’
আমি ওকে বললাম, ‘তোমার প্রথম সিনেমা (১৯৯৩ সালের ‘প্যাহলা ন্যাশা’) ফ্লপ ছিল। দ্বিতীয় সিনেমা (১৯৯৫ সালের ‘বাজি’), যেটাতে আমি ছিলাম সেটাও ফ্লপ। এখন তুমি আমার কাছে আবার এই ভুতুড়ে একটা গল্প নিয়ে এসেছো।
ও আমাকে তিন মাস পর ফোন দিল। বললো, ওর কাছে একটা স্ক্রিপ্ট আছে। আমাকে পড়ে শোনাতে চায়। আমি ওকে সাফ বলে দিলাম, ‘এটা যদি ওই ক্রিকেটের গল্পটা হয় তাহলে আমি শুনবো না!’
স্রেফ বন্ধু্ত্বের খাতিরে স্ক্রিপ্টটা শোনা শুরু করলাম। ভেবেছিলাম, রিজেক্ট করে দিবো। কিন্তু, যখন আমি পুরো স্ক্রিন প্লে শুনলাম, তখন স্রেফ হারিয়ে গেলাম। আর সেদিন থেকে আমি সিনেমাটির সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম।
লেখকদের যথার্থ সম্মান না দিলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি কখনো বিকশিত হবে না। এখানে দুই পক্ষের মধ্যেই কিছু সমস্যা আছে। খুব কম মানুষই ভাল আর খারাপ স্ক্রিপ্টের পার্থক্য করতে পারেন। আর প্রত্যেক লেখকই মনে করেন, তাঁর স্ক্রিপ্টই সেরা। তাই, তাঁরা নিজেদের স্ক্রিপ্টের দুর্বলতাটা ধরতে পারেন না।
কিছু কিছু লেখক, নিজেদের স্ক্রিপ্টের কোনো নড়চড় হতে দেন না। এটা কোনো সমস্যা না, বিষয়টাকে আমি সমর্থনও করি। কিন্তু, তাতে যেটা হয় আমি স্ক্রিপ্টটা নিয়ে আর কাজ করতে পারি না। কারণ, পরিচালক ও প্রযোজকরা আর সেই স্ক্রিপ্ট নিয়ে লড়তে পছন্দ করেন না। এখানে, সবারই সমঝোতা করে ফেলাটা শিখে ফেলতে হবে।
আমি অনেকদিন হল, বিশ্বাস করি যে লেখকরা কখনোই তাদের প্রাপ্যটা পান না। তবে, যত সময় যাচ্ছে এই বিষয়টায় পরিবর্তন আসছে। এটা খুবই জরুরী। এটা না হলে, ইন্ডাস্ট্রি এগোবে না।
আমি আগে লেখকসহ বাকিদের পারিশ্রমিকটা নিশ্চিত করি, পরে আমারটা। যখন আমি কোনো স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতে চাই, তখন সেটাকে গুরুতর একটা দায়িত্ব ভাবি।
চেষ্টা করি, যে বা যারা সিনেমাটিতে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা যেন সেই অর্থটা উঠিয়ে নিতে পারেন, তাঁদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। যখন, লাভ চলে আসে, যখন সবার দেনাপাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয় তখন গিয়ে আমি নিজের লভ্যাংশ নেই।
যখন কোনো সিনেমা ভাল ব্যবসা করে না, তখন আমি না পারতে টাকা নেই না। হ্যা, লাভ হলেই লভ্যাংশের পরিমানটা আমারই সবচেয়ে বেশি থাকে। কারণ, আমিই সবচেয়ে বেশি সময় দেই সিনেমাতে।
– দ্য কুইন্ট অবলম্বনে বলিউড তারকা আমির খানের বার্তা