অন্যের বেতন-ভাতা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। যদিও কর্পোরেট কালচারে, বন্ধু কিংবা কলিগরা খুব কমই নিজেদের বেতন-ভাতার অংকটা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করেন। সে কারণেই হয়তো জানার আগ্রহটা বেশি থাকে। তেমনি ভাবে বিশ্বনেতা, মানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের পারিশ্রমিক নিয়েও মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। সেই কৌতুহল মেটানোর জন্যই আমাদের এই আয়োজন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প (আমেরিকার রাষ্ট্রপতি)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যত অভিযোগই থাকুক না কেন তিনি তার বার্ষিক রাষ্ট্রীয় পারিশ্রমিক চার লাখ ডলার (প্রতি মাসে ৩৩ হাজার ডলার ও দৈনিক এক হাজার ৯৫ ডলার) নেন না। তাঁর মোট ব্যক্তিগত সম্পত্তির পরিমান ৩ বিলিয়ন ডলার, তাই তিনি বেতন ছাড়াই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন। স্রেম নিয়ম মানতে বছরে তিনি এক ডলার গ্রহণ করেন। ট্রাম্পের আগে হার্বার্ট হোভার ও জন এফ কেনেডিও আমেরিকার রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বিনা বেতনে কাজ করেছেন।
আমেরিকার আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির নূন্যতম বেতন এক হাজার ৬০ ডলার।
পেত্রো পোরোশেঙ্কো (ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি)
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি বছরে পারিশ্রমিক হিসেবে ১২ হাজার ২২০ ডলার নেন। তার মাসিক বেতন এক হাজার ১৮ ডলার, প্রতি দিনে আসে ৩৩ ডলার। যদিও ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় তিনি ইউক্রেনের ষষ্ঠ সেরা ধনী। তাঁর মোট সম্পত্তির মূল্যমান ১.৩ বিলিয়ন ডলার।জানিয়ে রাখা ভাল, ইউক্রেনের নূন্যতম বেতন ১৩৩ ডলার।
শি জিনপিং (চীনের রাষ্ট্রপতি)
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপধান শি জিনপিংয়ের বাৎষরিক পারিশ্রমিক ২০ হাজার ৫৯৩ ডলার (মাসিক এক হাজার ৭১৬ ডলার, দৈনিক ৫৬ ডলার)। ৬২ শতাংশ বৃদ্ধির পর ২০১৫ সাল থেকে তিনি এই বেতন ভোগ করে আসছেন। এই নেতা, তার স্ত্রী ও কন্যার নিজস্ব কোনো ব্যবসা নেই। তবে, তাঁদের নিকটাত্মীয়দের সম্পদের পরিমান প্রায় ৩৭৬ মিলিয়ন ডলার।
রাজ্য ভেদে চীনাদের নূন্যতম বেতন ১৫০ থেকে ৩০০ ডলার হয়ে থাকে।
সাউলি নিনিস্তো (ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি)
বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী রাষ্ট্রের প্রধান দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বার্ষিক এক লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ ডলার বেতন (মাসিক ১২ হাজার ২২৫ ও দৈনিক ৪০২) পেয়ে আসছেন। ফিনল্যান্ডে নূন্যতম বেতনের কোনো আইন না থাকলেও, তবে সূত্র দাবী করে সেটা দু’হাজার ডলারের আশেপাশে হয়ে থাকে।
ভ্লাদিমির পুতিন (রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি)
পুতিনের বার্ষিক বেতন এক লাখ ৫১ হাজার ৩২ ডলার (মাসিক ১২ হাজার ৫৮৬ ডলার ও দৈনিক ৪১৪ ডলারি)। রাশিয়ার নূন্যতম বেতন ১৪০ ডলার।
থেরেসা মে (ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী)
বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এই নারী বার্ষিক বেতন পান এক লাখ ৯৮ হাজার ৫০৯ ডলার (মাসিক ১৬ হাজার ৫৪২ ডলার ও দৈনিক ৫৪৪ ডলার)। তিনি জুতোর ব্যাপারে খুব সৌখিন। প্রতি জোড়া জুতো আলাদা স্বচ্ছ বাক্সে যত্ন করে রাখা হয়, যাতে করে প্রয়োজনের সময় খুঁজে পেতে কোনো সমস্যা না হয়। তাঁর রাষ্ট্রের নূন্যতম বেতন এক হাজার ৫৬৯ ডলার।
ইম্যানুয়েল ম্যাকরন (ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি)
ফ্রান্সের ইতিহাসের সবচেয়ে তরুণ রাষ্ট্রপতির বেতন দুই লাখ ১১ হাজার ৫৩০ ডলার (মাসিক ১৭ হাজার ৬২৮ ডলার ও দৈনিক ৫৮০ ডলার)। ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি বেশ সফল। তাকে ‘মোজার্ট অব ফ্রান্স’ নামে ডাকা হয়। তার কমিশন থেকে বার্ষিক আয় এক বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে নূন্যতম বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৭৫৮ ডলার।
জিমি মোরালেস (গুয়েতেমালার রাষ্ট্রপতি)
সাবেক অভিনেতা ও কমেডিয়ান জিমি মোরালেস লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া রাষ্ট্রপতি। তাঁর বার্ষিক বেতন দুই লাখ ৩১ হাজার ডলার (মসিক ১৯ হাজার ৩০০ ডলার ও দৈনিক ৬৩৪ ডলার)। যদিও, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পারিশ্রমিক ৬০ ভাগ তিনি দাতব্য কাজে ব্যয় করেন। গুয়েতেমালার নূন্যতম বেতন ২০০ ডলার।
অ্যাঞ্জেলা মার্কেল (জার্মানির চ্যান্সেলর)
জার্মানের এই রাষ্ট্রপ্রধান বার্ষিক দুই লাখ ৬৩ হাজার ডলার (মাসিক ২২ হাজার ডলার, দৈনিক ৭২০ ডলার) বেতন গুণেন। তিনি প্রশাসনিক ভাবে পাওয়া রাষ্ট্রীয় বাড়িতে থাকেনে না, থাকেন বার্লিনে তাঁর নিজস্ব পাঁচ তলা বাড়িতেই। ইউরোপের এই দেশটিতে নূন্যতম বেতন এক হাজার ৭৮০ ডলার।
জাস্টিন ট্রুডো (কানাডার প্রধানমন্ত্রী)
কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রীর বার্ষিক বেতনের পরিমান দুই লাখ ৬৭ হাজার ৪১৫ ডলার (মাসিক ২২ হাজার ২৮৫ ডলার, দৈনিক ৭৩৩ ডলার)। গত বছর তিনি ছুটিতে বাহামাসে যান, সেই সফরটা অর্থায়ন করেন ট্রুডোর মিলিয়নার বন্ধু প্রিন্স করিম আগা খান। সেটা নিয়ে কানাডায় বেশ বিতর্ক হয়। বলা হতে থাকে, কানাডার রাজনীতিতে প্রভাব খাটান এই প্রিন্স। যদিও, ট্রুডো নিজের ভুল বুঝে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন আর ভবিষ্যতে এসব ব্যাপারে আরো যত্নশীল হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
কানাডায় নূন্যতম পারিশ্রমিক প্রদেশ ভেদে ভিন্ন হয়। তবে, গড়ে সেটা ১৪০০ ডলারের মত।
ম্যালকম টার্নবুল (অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী)
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বেতন বছরে চার লাখ তিন হাজার ৭৪৫ ডলার (মাসিক ৩৩ হাজার ৬৪৫ ডলার ও দৈনিক এক হাজার ১০৬ ডলার)। নিজে একজন মিলিয়নার হওয়ার পরও নিজের বেতনের অধিনাক তিনি ছাড়েননি। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে একজন ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী। অস্ট্রেলিয়ায় একজন মানুষের নূন্যতম বেতন এক হাজার ৯০০ ডলার।
ডোরিস লেউদার্ড (সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি)
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির পদটা স্রেফ আলঙ্করিক। মন্ত্রীদের ভোটাভুটিতে তিনি এক বছর মেয়াদে নির্বাচিত হন। এই মুহূর্তে সেই পদে দ্বিতীয় মেয়াদে থাকা ডোরিস লেউদার্ড বছরে চার লাখ ৩৭ হাজার ডলার বেতন (মাসে ৩৬ হাজার ডলার ও দিনে ১২০০ ডলার) পান। এটা বাকি সব মন্ত্রীদের মোট বেতনের সমপরিমান।
সুইজারল্যান্ডে কোনো আইন দিয়ে নূন্যতম বেতন নির্ধারণ করা নেই। শুধু, ক্যান্টন অব নেউশ্যাটেলে ঘণ্টাপ্রতি ২০ ডলার পারিশ্রমিক দেওয়ার বিধান আছে।
লি হেসিয়েন লুঙ (সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী)
বাবা লি কুয়ান ইয়-এর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান লি হেসিয়েন লুঙ। লুঙের বাবার আমলেই সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বাবার দেখানো পথে ছেলেও রাজনীতিতে আসেন।
তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া রাষ্ট্রপ্রধান। বছরে তাঁর বেতন ২.২ মিলিয়ন ডলার। মাসে আসে ১৪৭ হাজার ডলার ও দিনে আসে সাত হাজার ৩৫০ ডলার। প্রধানমন্ত্রী নিজে মনে করেন বেতনের এই অংকটা ‘ন্যায্য ও বাস্তববাদী’। দেশটির সরকারের শীর্ষ ৩১ জনের পেছনে বার্ষিক যা খরচ হয় সেটা শুনলে রীতিমত আকাশ থেকে পড়বেন – ৫৩ মিলিয়ন ডলার!
আসলে লি হেসিয়েন লুঙের বেতনটা আসলে আরো বেশি ছিল। তবে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে তাঁর সরকার সেটা ৩৬ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। তার পরও এই প্রধানমন্ত্রী কানাডা, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের মোট বেতনের চেয়েও বেশি পেয়ে থাকেন।
সিঙ্গাপুরে নুন্যতম বেতনের ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে, সেটা এক হাজার ডলারের মত ধরা হয়।
– ব্রাইট সাইড অবলম্বনে