অকালপ্রয়াত স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে হবে মিসেস জুলিয়া খানকে। তুমুল জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ জুলফিকার খান ছিলেন এলাকার এমপি। তিন তিনবারের নির্বাচিত এমপি। এলাকায় উন্নতির জোয়ার বইয়ে দেওয়া এমপি তিনি। এমন একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি নিহত হলেন প্রতিপক্ষের ভাড়াটে কিলারের হাতে।
মিসেস জুলিয়া বাড়ির দোতলা বারান্দায় বসে ভাবছেন। ভাবছেন স্বামীর সাথে তার প্রথম ও শেষ দেখার ক্ষণটি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের চৌকষ মানুষটি ছিলেন সমাজকর্মী ও সাংষ্কৃতিক কর্মী। দারুন আবৃত্তি করতেন। প্রথম দেখা হয় নবীন বরণ অনুষ্ঠানে। সিনিয়র ব্যাচের এক সুদর্শন তরুনের কন্ঠে রবীন্দ্রনাথের কবিতা। জুলিয়া মূগ্ধ হয়েছিলেন সেই তরুনের আবৃত্তি শুনে। প্রতিটি শব্দ যেন মেঘমন্দ্রিত। আস্তে আস্তে জুলিয়া আর জুল্ফিকার হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসের উজ্জ্বল জনপ্রিয় জুটি ।
সেই মানুষটি ক্রমেই রাজনীতিবিদ হলেন। এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে পারিবারিক ব্যাবসা ও পারিবারিক রাজনীতিতে জড়িয়ে গেলেন। এমপিও হলেন। দুরত্ব বাড়তে থাকল জুলিয়ার সাথে। খুব অচেনা মানুষ হয়ে উঠলেন জুল্ফিকার। গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক খানায় এলাকার মানুষের সাথে দেন দরবার। কত রকমের সুপারিশ! ভাল সুপারিশ মন্দ সুপারিশ। লোকজনকে বশ করে রাখাই তার মূল কাজ। জুল্ফিকার কাজটি খুব নিষ্ঠার সাথে করে।
এর মধ্যে যুক্ত হলো নতুন কাহিনী। নারী নেত্রি হেলেনের সাথে তার সম্পর্ক।
জুলিয়ার সাথে এই নিয়ে তার কম ঝগড়া হয়নি।
জুলফিকার যেদিন মারা যান তার আগের দিন রাতে নিচের বৈঠকখানায় জুলিয়া হঠাৎ হানা দেয়। বাইরে দারোয়ান ফজলু ইতস্তত করে। যাবেন না ম্যাডাম, স্যার বিজি।
বৈঠক খানার ভেজানো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখেন তার স্বামী নেত্রী হেলেনের উন্মুক্ত বুকের উপর তপ্ত নি:শ্বাস ফেলছেন। স্ত্রীর এহেন অনধিকার অনুপ্রবেশ এবং কাংক্ষিত সংগমের অসমাপ্ত শৃংগারের ছুটে যাওয়া নেশার ঘোরে উন্মাদ হয়ে ওঠেন জুল্ফিকার। লাইসেন্স করা রিভলভার ঠেকান জুলিয়ার মাথায়। নারী নেত্রী হেলেনের মধ্যস্ততায় নিরস্ত হন জুলফিকার। একটি খুন অসমাপ্ত রয়ে যায়।
পরদিন দুপুরে আচমকা খুন হন জুলফিকার নিজেই।
এরপর আর কোন কিছুই জুলিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকেনা।
স্বামীর আসনেই নির্বাচন করতে হয় জুলিয়াকে। পরিবারের দাবী, এলাকার মানুষের দাবী পূরণ করতে হয়। নিরংকুশ বিজয় হয় জুলিয়ার।
নবনির্বাচিত এমপি জুলিয়া স্বামীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। গল্পের শুরুতে আমরা যে ঝুল বারান্দার কথা বলেছিলাম, যেখানে জুলিয়া একা বসে ভাবছিলেন তার স্বামীর কথা, সেখান থেকে ফিরে আসেন বৈঠকখানায়। রিভলবারটি ছিল ড্রয়ারে। স্বামীর অসংখ্য অসমাপ্ত কাজের ভেতর দুটি অসমাপ্ত কাজ তাকে ভাবায়। একটি অসমাপ্ত সংগম ও একটি অসমাপ্ত খুন।
জুলিয়া কোনটিকে বেছে নেবেন ভাবতে থাকেন। ভাবতে বেশি সময় লাগেনা। কারণ প্রথম কাজটি নারী হিসেবে তার পক্ষে কার্যত অসম্ভব।