সাইফাই ছবির অনন্য জগতে স্বাগতম

আপনি সিনেমা দেখেন নিয়মিত কিন্তু সাইফাইয়ের ভক্ত নন, এটা অসম্ভব। সিনেমা জগতের অন্যতম উপভোগ্য জনরার নাম সায়েন্স ফিকশন। বিজ্ঞান আর কল্প মায়ার জালে চোখের পলকে রোমাঞ্চকর এক যাত্রায় হারাতে সাইফাইয়ের তুলনা নেই। চলুন তবে, কিছু কল্প বিজ্ঞানভিত্তিক সিনেমার দুনিয়ায় ঢুঁ মেরে আসি।

  • অ্যারাইভাল (২০১৬)

মনের ভাব প্রকাশের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম ভাষা। বুদ্ধিমান প্রাণী মাত্রই ভাষার ব্যবহার জানে। পৃথিবীতে আসা একদল এলিয়েনের সঙ্গে এই ভাষার মাধ্যমেই যোগাযোগ স্থাপন করতে চায় একজন ভাষাবিদ ও একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী! এলিয়েন বেজড সিনেমায় সচরাচর দেখি, তারা পৃথিবীতে এসে সব তোলপাড় করে দিচ্ছে। কিন্তু ডিরেক্টর ড্যানিস ভিলেনয়েভুর ‘অ্যারাইভাল’ চলচ্চিত্রের গল্পটা ভিন্নধর্মী। এলিয়েনরা মানুষকে সাহায্য করতে আসে, বিনিময়ে তারাও সাহায্য চায়। ভিন্ন আবহে তৈরি সিনেমাটি দর্শকে অন্যরকম এক স্বাদ দেবে।

  • কোহেরেন্স (২০১৩)

আটজন বন্ধুবান্ধব মিলে পার্টির আয়োজন করে এক রাতে। সেইরাতেই মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় ধূমকেতু। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে দুই বন্ধু দেখতে বের হয় আশপাশের বাড়িগুলির কী অবস্থা। হঠাৎ একটা বাড়ির জানালায় চোখ আটকে যায় তাদের। এমা! এ যে তারা! একই রকম আটজন, অথচ এরা অন্যমানুষ! ওরা ঘরে ফেরে৷ ধীরে ধীরে আবিষ্কার করে প্রত্যেকেই স্রেফ দুইজন করে নয়, আরো একাধিক দল আছে। মাত্র পঞ্চাশ হাজার ইউএস ডলারে তৈরি প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে দেড়ঘন্টার দুর্দান্ত সিনেমাটি আপনার মাথা ঘুরিয়ে দেবেই।

  • ইনসেপশন (২০১০)

এই সিনেমা সবার দেখা। তাও আলোচনা যখন সাইফাই নিয়ে হচ্ছে, ক্রিস্টোফার নোলানের ইনসেপশনকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। স্বপ্নের ভেতর স্বপ্ন, তার ভেতর স্বপ্ন, এর ভেতর স্বপ্ন। দর্শক যাতে দেখার সময় গুলিয়ে না ফেলে তাই জাপানে চলচ্চিত্রটি চলার সময় টিভির কোণায় স্বপ্নের কোন লেভেল চলছে তা উল্লেখ করে দেওয়া হয়! যারা দেখেননি, নোলানের পরিচালনায় লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর মাস্টারপিসটি এখনই দেখতে বসুন।

  • কন্টাজিওন (২০১১)

ম্যাট ডেমন, কেট উইন্সলেটের সিনেমাটি ভাইরাস নিয়ে হলিউডের অন্যতম ভালো একটি কাজ। এটি এখন ট্রেন্ডিং মুভি। কেননা এতে দেখানো ভাইরাস, এর অবস্থান, রোগীর হাল হকিকত সব মিলছে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে! কন্টাজিওন যেন নয় বছর আগে আজকের ভয়াবহতার গল্পটা দেখিয়েছিল পৃথিবীকে!

  • আপসাইড ডাউন (২০১২)

রোমান্টিক ফ্যান্টাসি মুভি। দুটো সমান্তরাল পৃথিবীর দুই যুবক-যুবতীর প্রেম, বাধা এসব নিয়ে গল্প। ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হচ্ছে, সিনেমাটি দেখার সময় মোবাইলকে এদিকওদিক, উপর-নীচ ঘুরানো লাগবে।

  • সোর্স কোড (২০১১)

কোয়ান্টাম ফিজিক্স আর টাইম লুপের ছোঁয়ায় অনবদ্য এই সিনেমায় দুরন্ত অভিনয় করেছে জ্যাক গিলেনহল। জ্যাক ইউএস আর্মির একজন পাইলট। তাকে একটি ট্রেনে পাঠানো হয় যাতে বোম রয়েছে। তার হাতে আট মিনিট সময়। প্রথম কয়েকবার সে ব্যর্থ হয়। তাকে বারবার পাঠানো হয় ওই ট্রেনে। ভিরমি খাচ্ছেন? আসলে জ্যাককে টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমে পাঠানো হয় ওই ট্রেনে। প্রতিবার সময় ওই আট মিনিটই। সে কি পারবে ব্লাস্ট রুখতে? উত্তর পেতে দেখে ফেলুন সোর্স কোড।

  • ওয়াল ই (২০০৮)

যদি বলা হয়- অ্যানিমেশন জগতের একটামাত্র মুভি দেখব, কোনটা সাজেস্ট করবেন? দ্বিতীয়বার না ভেবে ওয়াল ই’র নাম বলব! কোকো আসার আগঅব্দি ডিজনির সেরা চলচ্চিত্রের আসন ছিল ওয়াল ই’র দখলে। অস্কারজয়ী এই সিনেমায় পরিচালক অ্যান্ড্রু স্ট্যানটন খুব সুন্দর করে প্রেম, ভালবাসা, আনন্দ, আবেগ এসব ফুটিয়ে তুলেছেন। সিনেমার গল্প এগিয়েছে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর এক রোবট ওয়াল ইকে নিয়ে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে। সভ্যতার কোন নিদর্শন নেই। ই-বর্জ্য পরিষ্কার করাই হচ্ছে একলা রোবটির দৈনন্দিন কাজ। এতে তার সঙ্গী একটি তেলাপোকা। ঠিক সেইসময় ইভা নামক একজন মেয়ে রোবটের দেখা পায় ওয়াল ই।

  • স্নোপিয়ার্সার (২০১৩)

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের হাত থেকে বাঁচতে অনেকগুলো দেশ মিলে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর প্রকল্প হাতে নেয়। এতে উল্টো গোটা পৃথিবী বরফে আচ্ছাদিত হয়। মারা যায় সকল জীব। শুধু একটি ট্রেনের কিছু যাত্রী বেঁচে থাকে। সতেরো বছর ধরে অজানা গন্তব্যে ছুটে চলা সেই ট্রেনে উঁচুনিচু দুই শ্রেণিরই মানুষ আছে। এলিট ক্লাসের লোকদের দ্বারা নির্যাতিত নিচুরা শুরু করে লড়াই। ক্রিস ইভান্স অভিনীত সিনেমাটিতে অ্যাকশনের স্বাদও পাবেন।

  • অ্যালিটা : ব্যাটল অ্যাঞ্জেল (২০১৯)

ছাব্বিশ শতকের পৃথিবীতে ডক্টর ইডো খুঁজে পান তিনশ বছরের পুরনো এক মেয়ে রোবটকে। নিজের ল্যাবে এনে নতুন করে তাকে গড়েন তিনি। তৈরি করেন লেডি সাইবর্গ। কিন্তু রোবটটি তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। স্মৃতি হারালেও ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারে তার মধ্যে আছে অদ্ভুত শক্তি। জেমস ক্যামেরনের প্রযোজনায় অসাধারণ সাইফাই থ্রিলার সিনেমাটি দেখতে বসলে শেষ না করে ওঠতে মন চাইবে না। কিছু সাসপেন্স রেখে শেষ হওয়া অ্যালিটার দ্বিতীয় কিস্তিতে মিলবে রহস্যের সমাধান।

  • ফ্লু (২০১৩)

বুংডং শহরে কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নতুন এক ভাইরাস ঘন্টায় ঘন্টায় কেড়ে নিচ্ছে হাজারের বেশি প্রাণ! কোরিয়া ছাড়িয়ে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। একটা ভাইরাস কতটা ভয়ানক আর প্রাণঘাতী আকার ধারণ করতে পারে তা দেখিয়েছে কোরিয়ান এই চলচ্চিত্রটি।

  • মরটাল ইঞ্জিনস (২০১৮)

সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে। এক বিজ্ঞানী নতুন করে শহরগুলোতে ইঞ্জিন চাকা এসব লাগিয়ে চলমান বানিয়ে ফেলেছে। বড় শহরগুলি দখল করতে থাকে ছোট শহরকে। তার দৌরাত্ম্য যখন বাড়তে থাকে তখন পনেরো বছর বয়সী এক কিশোর তার বন্ধুদের নিয়ে বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে এগিয়ে আসে। পরিচালনায় ছিলেন ক্রিচিয়ান রিভার্স। যিনি বানিয়েছেন লর্ড অব দ্য রিং সিরিজ, হারকিউলিস, দ্য হবিটের মতোন সিনেমা। মরটাল ইঞ্জিন বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ না দেখলেও এর কনসেপ্ট, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট আর অভিনয় প্রশংসনীয়।

  • ডিস্ট্রিক্ট নাইন (২০০৯)

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের আকাশে স্থির হয়ে থাকা একটি স্পেসশিপ দেখা যায়। ঘটনা জানতে বিমানবাহিনী ওই প্রবেশ করে থতমত খায়! অসংখ্য রুগ্ন, জীর্ণশীর্ণ এলিয়েনে ঠাসা শিপ। তাদেরকে নিচে নামিয়ে আনা হয়। একটি বেজক্যাম্প করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তারপর বিশ বছর কেটে যায়। ডিস্ট্রিক্ট নাইন নামক সেই ক্যাম্পে আন্দোলন শুরু করে এলিয়েনরা। তারা নিজ গ্রহে ফিরে যেতে চায়। অথচ তাদের স্পেসশিপ নষ্ট! এই সিনেমার সবচেয়ে স্ট্রং দিক এর কাহিনী। বেশ গোছালো। সঙ্গে অ্যাকশন আর থ্রিল। কয়েক জায়গায় গোজবাম্প দেওয়া বিজিএম। ৩০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের ২১১ মিলিয়ন আয় করা এই চলচ্চিত্র সাইফাইপ্রেমীদের জন্য মাস্টওয়াচ।

সর্বশেষ