১.
-রহিম্মা জানোস, পাশের সাততলা বাড়ির নিচে দেখলাম চারটে গরু!
-কস কি! চারটাআআআ। তাইলে তো ওইখানকার গরুর মাংস নিয়ায় হইয়া যাইতাসে।
-নাহ! কাইল পুরা শহরে গোশত কুড়ামু। বড় বড় পলিথিন লাগবো বুঝছোস?
-আমি ছয়খানা গুছাইসি। ১০ ট্যাকা নিছে!
-ধুর! ছয়টায় কিছু হয় নাকি! আরও চারখানা নেওন লাগবো।
-আইচ্চা, হইয়া যাবে। শুন, এক পলিথিন হইয়া গেলে কিন্তুক বস্তিতে পাঠাই দিতে হবে। মায়ে রান্না করবে, গেলদিন কাগজ কুড়াইয়া যা পাইসি তা দিয়া মশলাপাতি কিনছি।
-হহ। সব হবে। ১০ পলিথিন গোশত কুড়াইতে পারলে আগামী তিন মাস খাইতে পারুম।
-উহু, শুধু খাইলে চলবো? এ কদিন কাগজ কুড়ানোর কাম বাদ। আমি তিন বস্তা বেচুম, ওই দিয়া চালামু। আর গোশত ফিরিজি রাখার জন্যি ফজলু চাচারে যে প্রতিদিনের জন্যি ৫ ট্যাকা কইরা দিতে হবে, সেডা? মাথায় আছে?
– হ, আছে। সেডাও হইয়া যাইবো। আইচ্চা, আমিও বেচুম তাইলে গোশত। হেহে।
-পোলায়ের চাইল কিনতে পারিনি। তুই?
-আমি সাদা ভাত খামু। গোশত পাইতাসি এই তো কত।
-হ, তাও ভালো কোরবানীর ঈদ ছিলো, ফিরি ফিরি গোশত খাইতে পারতাসি।
-ঠিকই কইসস, রুজার ঈদ হইলে তো বড়লোক আপা-ভাইরা দল বাইন্ধা আইসা নতুন প্যান্ট-শাট দেয়। কোরবানীতে গোশতই ভরসা।
-বহুত হইসে, চ এলাকা ঘুইরা দেহি কই কই কিরাম গরু-ছাগল আছে। যেদিকি বেশি সেদিকি আগে যাইতে হবে কাইল সকালে।
-হহ চল!
২.
-মা? কেমন আছো?
– হ্যা, আছি। তুই আসবি না তাই না?
-না মা, আসা হবে না।
-কাল ঈদের সকালে কি খাবি?
– খাবো মা, খাবো। চাপ নিও না।
-কাল নামাজ পড়বি তো?
-হ্যা, পড়বো।
-আচ্ছা, তোর খারাপ লাগছে খুব?
ফোনের ওপাশে কেঁদে উঠলো রিদু। মুখ সরিয়ে নিলো যেন মা ওপাশ থেকে টের না পায়। এবারই প্রথম বাইরে ঈদ করছে, এমনটা নয়। এর আগেও একবার হয়েছে।
-না মা! ঠিক আছি। অফিস তো আমাকে ছাড়া চলেই না বুঝলে না! অনেক দায়িত্ব আমার!
-আমাকে পাগল বুঝাইস? কি কাজ তোর?
-আরে মাহ! কতকিছু হতে পারে কাল! ধরো কোন জায়গায় আগুন ধরে গেল, আমাকে ছাড়া চলবে বলো? ধরো গাড়ি উলটে গেল, আমাকে ছাড়া চলবে কি? আমি যে ফায়ারম্যান!
-হ্যা। সেটাই। তোর জন্য ঈদের পর মাংস পাঠাই?
-না মা, আমি এদিকে খেয়ে নেব। আর ঈদের পর তো আসবোই।
পরদিন সকাল। কেবল নামাজ শেষ করে এলো রিদু। পরনে পাঞ্জাবী আর ফায়ার ব্রিগেডের ইউনিফর্মের প্যান্ট। নিজে রান্না করতে পারে না। তাই কলা আর পাউরুটি খাচ্ছে ঈদের সকালে। এমন সময় মায়ের ফোন।
-নামাজ শেষ?
– হ্যা, ফিরলাম মাত্র।
-কি খেলি?
-তোমরা কি খেলে?
-সেমাই, পায়েস আর গাজর-নারিকেলের হালুয়া করেছি। সাথে পরটা আর চালের রুটি, মুরগীর মাংস।
-হাহাহ। আমিও খাচ্ছি। পায়েশ-সেমাই। আর পরটার সাথে গরুর মাংস।
মাকে বুঝতে দিতে চায় না রিদু। পাছে কষ্ট পাবে মা। বেশিক্ষণ কথাও বলতে পারছে না। ওই যে ঘন্টা বেজে গেল। সাইরেনের শব্দ। কোথাও কিছু হয়েছে। উঠতে হবে এখনই। এভাবেই।
-উঠি মা, যেতে হবে সাইরেন বেজেছে।
-ওহ। আচ্ছা যা! সাবধানে থাকিস বাবা!
-হ্যা মা। দোয়া করো। বেঁচে থাকলে পরের ঈদে তোমার কোলে ফিরবোই।
আপনার চারপাশে ছড়িয়ে আছে অনেক মানুষ। তাদের ঈদগুলোও হয় ভিন্ন। নিজেদের ইচ্ছেগুলোকে কুরবানি করে তারাও।