ছবির নাম জুলফিকার, আইএমডিবি রেটিং ৫.৭। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বেশ সাড়া ফেলেছিলো এই ছবি। আমি তখন আকর্ষণ অনুভব করিনি আর তাই দেখাও হয়নি। কিন্তু গতকাল কী মনে করে যেন দেখতে বসলাম। ওই যে বসলাম, এক নিঃশ্বাসে শেষ করে এরপর উঠলাম। মাঝে শুধু একবার উঠেছিলাম ফ্রিজ থেকে কোক বের করার জন্য।
প্রথম অংশের কাহিনী মোটামুটি সাধাসিধেই বলা যায়। স্থানীয় রাজনৈতিক অবস্থা, প্রশাসন আর ‘নীতিবান’ অপরাধ জগৎকে ঘিরে সাজানো পটভূমি। ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা, প্রতিশোধের নেশা, টুকরো-টাকরা অপরাধ দিয়ে সাজানো। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের দুই ট্র্যাজেডি – ‘জুলিয়াস সিজার’ ও ‘অ্যান্টোনি ও ক্লিওপ্রেট্রা’র গল্পের সন্নিবেশ পাওয়া যায় এই সিনেমায়।
কিন্তু, শেষ মুহূর্তে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় যে ক্লাইম্যাক্সটুকু পুরে দিয়েছেন, এই মুভিকে মাস্ট ওয়াচ লিস্টে ফেলার জন্য তাই-ই যথেষ্ট। এই মুভি দেখার সময় বোর হওয়ার কথা না। পুরো মুভি জুড়ে ঠুনকো ঠুনকো উত্তেজনা দিয়ে সাজানো। গভীর মনোযোগ দিয়ে শুরু না করলেও চলবে। একটু পর এমনিতেই মনোযোগ চলে আসবে।
মুভির শুরুতে দেখা যায় একজন বদলী হওয়া পুলিশ ইন্সপেক্টর (রাহুল বন্দোপাধ্যায়) নতুন ইন্সপেক্টরকে থানার কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির বিশদ বর্ণনা দিতে গিয়ে স্মৃতির পাতা হাতড়ে ভারী নিঃশ্বাস মিশ্রিত কন্ঠে সিন্ডিকেট এবং তার শেষ একনায়ক, স্থানীয় অপরাধ চক্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী, জনদরদী সদস্য জুলফিকারের (প্রসেনজিৎ) উত্থান এবং পতন ফুটিয়ে তোলেন।
শুরুটা হয় আশির দশকের এক স্থানীয় জনপ্রিয় জনদরদী ‘সন্ত্রাসী’-কে দিয়ে আর শেষটা টানে এক ভদ্র সুবেশী, ডাক্তারী পড়ুয়া আখতার আহমেদ (অঙ্কুশ), সম্পর্কে জুলফিকা্র আহমেদের ভাতিজা।
ক্ষমতার লোভ কীভাবে মানুষকে পশুতে পরিণত করে এবং ক্রোধান্ধ মানুষ কীভাবে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায়, তাই মূলত এই মুভির ম্যাসেজ। আমার কাছে চমৎকার লেগেছে। আমি কলাকুশলীদের অভিনয়ের প্রশংসা না করে পারছিনা।
- প্রসেনজিৎ
এক কথায় অসাধারণ। জুলফিকার চরিত্রকে এর চাইতে ভালো করে কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারতোনা। এই লোককে বাংলা আমির খান বললে ভুল হবেনা। (৯/১০)
- দেব
পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে দেবের কোনও ডায়লগ নেই। সে একজন মূক প্রতিবন্ধীর অভিনয় করেছে। আমার দেখা বুনোহাঁসের পর এটাই দেবের সেরা পারফরম্যান্স। (৯/১০)
- যীশু সেনগুপ্ত
সেরা। এই লোক হলো ওয়াইনের বোতল। যত পুরনো হয়, তত নেশা বাড়ে। (৯.৫/১০)
- পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
ভিন্নধর্মী কিছু দেখতে পেলাম এখানে। অ-সা-ধা-র-ণ। (৯/১০)
- অঙ্কুশ
ভালো ছিলো। আমি ওনার আর কোনও মুভি দেখিনি। তাই এটাই আমার কাছে সেরা। (৮/১০)
- রাহুল বন্দোপাধ্যায়
কোনও খুঁত ছিলোনা। মনে হচ্ছিলো জাত পুলিশ অফিসার। (৯/১০)
- কৌশিক সেন
নিজের সেরাটা ঢেলে দিয়েছেন ভদ্রলোক। পারফেক্ট। (৮.৫/১০)
- পাওলি দাম
একজন নেশাগ্রস্ত, কিঞ্চিৎ মানসিক বিকারগ্রস্ত স্ত্রীর ভূমিকায় অসাধারণ ছিলো পাওলি। (৯/১০)
- নুসরাত জাহান
বেশ সপ্রতিভ ছিলো। আমার দেখা এখনও পর্যন্ত এইটা নুসরাতের অভিনয় করা সেরা রোল। (৯.১/১০)
এছাড়াও কাঞ্চন মল্লিক, জুন মালিয়াসহ বাকি সবাইই প্রাণপণে চেষ্টা করেছে, বুঝাই যাচ্ছিলো। মুভির কাহিনী যেমনই হোক, অন্তত প্রত্যেকের অভিনয় দেখার জন্য হলেও মুভিটি একবার করে দেখা উচিত।