রোয়ান অ্যাটকিনসন – তাঁর সিভিতে চাইলে তিনি ৫০ টির বেশি সিনেমা-সিরিজের নাম লিখে ফেলতে পারবেন। তবে, এর কোনোটাই মিস্টার বিন সিরিজকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। আর সেটা এতটাই যে ভক্তরা যতটা তাকে রোয়ান অ্যাটকিনসন নামে চেনেন তার চেয়ে বেশি জানেন মিস্টার বিন নামে।
যদিও, তার ব্যাপারে অজানাও আছে অনেক কিছু। সেসব নিয়েই আমাদের এই আয়োজন।
অ্যাটকিনসন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্কুলমেট ছিলেন। দু’জনই পড়েছেন ডারহ্যাম চোরিস্টার্স স্কুলে। ব্লেয়ার ছিলেন দু’বছরের সিনিয়র। বন্ধুদের হাসানো তো দূরের কথা, খুব ইন্ট্রোভার্ট ছিলেন অ্যাটকিনসন। স্কুলটির সাবেক হেড মাস্টার ক্যানোন জন গ্রোভ তেমনটাই দাবী করেন।
ছোট বেলা থেকেই তোতলামির সমস্যা ছিল অ্যাটকিনসনের। ‘বি’ অক্ষর থাকা শব্দ গুলো উচ্চারণে তার সমস্যা হত। তিনি পরবর্তীতে ‘ওভার-আর্টিকুলেশন পন্থা অবলম্বন করেন।
পড়াশোনায় বরাবরই সিরিয়াস ছিলেন অ্যাটকিনসন। ১৯৭৫ সালে তিনি অক্সফোর্ডের কুই্ন্স কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ৪০ বছর আগে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তাঁর বাবা একই বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছিলেন।
মাস্টার্সে থাকাকালীন সময়েই তার অভিনয় প্রতিভা বিকশিত হয়। একই সাথে দারুণ স্কেচও করতেন। মিস্টার বিন সিরিজের স্ক্রিপ্ট রাইটারদের একজনও এই অ্যাটকিনসন। মজার ব্যাপার হল, মিস্টার বিন সিরিজের নাম প্রথমে ছিলেন মিস্টার হোয়াইট, পরে পরিবর্তন করে রাখা হয় মিস্টার কোলিফ্লাওয়ার। পরে মিস্টার বিনে এসে থিঁতু হয়। অনেক জনপ্রিয় হওয়ার পরও মিস্টার বিন সিরিজে আছে ২৫ মিনিট করে মোটে ১৪ টি এপিসোড। প্রায় ২০০ টি দেশে মিস্টার বিন সম্প্রচারিত হয়। পরে ২০০৭ সালে মুক্তি পায় ‘মিস্টার বিন’স হলিডে’ নামের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা।
মিস্টার বিনকে নিয়ে এখন অবধি তিনটি বই প্রকাশ হয়েছে। `মিস্টার বিন’স ডায়েরি` প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। `মিস্টার বিন’স পকেট ডায়েরি` প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে।
পুরোদস্তর অভিনেতা বনে যাওয়ার আগেই অ্যাটকিনসন কিছু সিনেমা ও টেলিভিশন সিরিজ করেন। বিবিসি’র কমেডি শো ‘নাইন ও ক্লক নিউজ’-এ তিনি বেশ আলোচিত হন।
সাবেক স্ত্রী ভারতীয় বংশদ্ভুত সুনেত্রা শাস্ত্রীর সাথে অ্যাটকিনসনের পরিচয় হয় ‘ব্ল্যাক্যাডার’-এর সেটে। সুনেত্রা ছিলেন মেকআপ আর্টিস্ট। তাদের বেঞ্জামিন ও লিলি নামের দু’টি সন্তানও আছে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে তাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে ছাড়াছাড়ি হয়। এর আগের বছরই তিনি ফোর্ড লুইসের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যান। আর গত বছরের ডিসেম্বরে প্রায় ৬৩ বছর বয়সে তিনি তৃতীয় সন্তানের বাবা হন।
লরি বা বড় ট্রাক জাতীয় গাড়ীর প্রতি অ্যাটকিনসনের মোহ আছে। তাই, ১৯৮১ সালে তিনি লরি ড্রাইভিংয়ের ‘ক্লাস ওয়ান’ লাইসেন্স নিয়ে নেন। একই সাথে গাড়ী ও রেসিংয়েরও দারুণ ভক্ত তিনি। অনেকগুলো গাড়ীও আছে তার গ্যারেজে। এর মধ্যে ম্যাকলরেন এফওয়ান, রেনল্ট ফাইভ জিটি টার্বো, অস্টিন মেট্রো, স্কোডা সুপার্ব, অডি এএইট ও হোন্ডা সিভিক হাইব্রিড অন্যতম।
১৯৯৭ সালে পাঁচ লাখ চল্লিশ হাজার পাউন্ড খরচ করে তিনি কিনেছিলেন তার ম্যাকলরেন এফওয়ান। ২০১১ সালে অক্সফোর্ডশায়ারে সেটা দুর্ঘটনার শিকার হলে অ্যাটকিনসন নয় লাখ ১০ হাজার পাউন্ডের ইন্সুরেন্স দাবী করেন। এটা খোদ ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। যদিও পরবর্তীতে ১২ মিলিয়ন পাউন্ডে গাড়ীটি বিক্রি করে দেন অ্যাটকিনসন।
যদিও গাড়িটির বাজারদর তখন ছিল আট মিলিয়ন পাউন্ড। মিস্টার বিনের গাড়ি বলে কথা। পুরনো হলেও তাই দামটা বেশি তো হবেই।
অর্থকড়ি তার জন্য কোনো ঘটনাই না। গোটা অভিনয় জীবনে এখন অবধি তিনি ৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড (১৩০ মিলিয়ন ডলার) কামিয়ে ফেলেছেন। লন্ডন ও অন্যান্য জায়গায় তার বিস্তর জায়গা ও বাড়ি আছে।
২০০১ সালে মার্চে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নিজস্ব বিমানে করে কেনিয়ার উকুন্ডু থেকে নাইরোবির উইলসন বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন অ্যাটকিনসন। সেজনা ২০২ বিমানের পাইলট আকাশে থাকা অবস্থাতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ওই অবস্থাতে বাধ্য হয়েই বিমানের পাইলট বনে যান অ্যাটকিনসন। আর বলাই বাহুল্য, কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই বিমানটি বন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।
অ্যাটকিনসন একবার জেমস বন্ড সিরিজেও কাজ করেন। ১৯৮৩ সালে শন কনারি অভিনীত ‘নেভার সে নেভার এগেইন’-এ সাপোর্টিং রোলে দেখা যায় তাকে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে রানী এলিজাবেথের জন্মদিনে অ্যাটকিনসনকে কমান্ডর অব দ্যা অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (সিবিই) সম্মানে ভূষিত করা হয়।
২০১৩ সালে মিস্টার বিন সিরিজ তাদের ২৫ তম বার্ষিকী উদযাপন করে। সেবার অভিনয় কায়দায় দিনটি স্মরণীয় করেন অ্যাটকিনসন। তার আইকনিক হলুদ রঙের ব্রিটিশ লেয়ল্যান্ড মিনি ১০০০ মডেলের গাড়ির ওপরে সোফা বেঁধে বসে ঘুরে বেড়ান বাকিংহ্যাম প্যালেসের চারপাশে। তবে, এর একবছর আগেই মিস্টার বিন চরিত্রে আর কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন অ্যাটকিনসন।
যদিও, বাস্তব জীবনে তিনি মোটেও এমন আমুদে নন। বন্ধু ও কাছের মানুষদের কাছে তিনি প্রচণ্ড গম্ভীর ও রাশভারী মানুষ হিসেবেই পরিচিত। অথচ, এই লোকটি দিনের পর দিন বিশ্বজুড়ে মানুষদের হাসির খোড়াক যুগিয়ে গেছেন!
– আনবিলিভেবলফ্যাক্টস.কম অবলম্বনে