আজকাল শুভ সমস্ত জাগ্রত সময় বিরক্ত মুখে কাটায়। চারপাশ বিষের মতো তিতা, বাতাসে বিষ, বৃষ্টিতে বিষ, মানুষের কথাতেও বিষ। ইশা’র সাথে পরিচয়ের পর থেকে শুভর চারপাশ বিষ লাগে। শুভ শুনেছিল প্রেম নাকি মধুর মতো মিষ্টি। সেই প্রেম নিজের হাতে ঘাটাঘাটি গিয়ে পরেছে কঠিন যন্ত্রণায়। প্রায় এক মাস পরে ওদের আজ মান অভিমানের দ্য এন্ড হয়েছে এবং ওরা পাশাপাশি বসে বাদাম খাচ্ছে। শুভ খেয়াল করলো ইশা মুখ ভোতা করে বসে আছে। শুভ জিজ্ঞেস করলো –
– এতদিন পরে দেখা অথচ তোমার মুখে হাসির ঝলক পাচ্ছি না।
– একটা চাপা দুঃখবোধ পীড়া দিচ্ছে।
– তোমার মস্তিষ্কতে অটোমেটিক ম্যাকানিজমে সেট করা আছে ‘তুমি দুঃখী, অসুখি’। দয়া করে তোমার মস্তিষ্কটাকে বল এই বিরক্তিকর সেটিং বদলাতে।
– তুমি প্রেমের শুরুর দিকে বলেছিলে আমার সুখের দায়িত্ব তোমার।
– বলে বিরাট ভুল করেছি। তোমার সুখের দায়িত্ব নেওয়া সহজ কর্ম হয়।
ইশা বাদামের ঠোঙা ছুড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায়। শুভ অপ্রস্তুত ভাবে জিজ্ঞেস করে-
– কোথায় যাচ্ছ?
– এমন একজনের কাছে যে সুখের প্রেসক্রিপশন লিখতে পারে।
– তোমাকে সুখি করতে পারবে এমন ছেলে পয়দা হয় নাই। যাও গিয়ে খুঁজো। পেলে আমাকে জানিয়ো, আমি ঐ ছেলেরে প্রণাম করে আসবো।
ইশা সুখের জন্য পরের দিন শুভর কাছেই এলো। শুভ ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ইশাকে দেখে খাতাপত্র বন্ধ করে গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করলো –
– গতকালের সিদ্ধান্ত বাতিল ইশা? আবার আমার কাছে?
– হুম।
– আমার কাছে সুখ চাইলে কিন্তু অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।
– কতদিন?
– তোমাকে আদর করার সময় উত্তেজনায় প্রতিদিন তোমার ড্রেসের বোতাম ছিড়ে ফেলবো এবং নতুন ড্রেস কিনে দেবো। প্রতিদিন নতুন ড্রেস কিনে দিতে পারবো যেদিন, অপেক্ষা করতে হবে সেইদিন পর্যন্ত।
বলতে গিয়ে শুভর চোখে পানি এসে গেলো। শুভর চোখে পানি দেখে ইশা মৃদু হেসে বলল-
– এমন রোমান্টিক একটা কথা বলে কেউ কাঁদে? গাধা নাকি তুমি?
ইশা ওর কানে আলতো করে টান দিয়ে শব্দ করে হেসে ফেলে। আজ ওদের দিনটা ভাল গেল, দু’জন বিশ্রী ভাবে ঝগড়া করলো না। কিন্তু এর মানে এই না যে ঝগড়া বন্ধ হয়ে গেলো। অতি আগ্রহের সাথে পরের দিন তারা বসে বসে ঝগড়া করছে। ঝগড়া শুরু হল আবারও সুখ আর দুঃখ নিয়ে। শুভ বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বলল-
– আমি দুজনের সম্মতিতে ব্রেক আপ চাই।
– তুমি আর দুঃখী একটা মানুষের সাথে থাকতে চাও না, তাই তো?
– হুম তাই।
– তোমার প্রিয় প্রিয়ন্তি আপুর জন্য?
– সে তোমার চেয়েও দুঃখী। তুমি দুঃখ বিলাসী, আর ও আজন্ম দুঃখী। ওর কথা তোমার মুখে এভাবে আশা করি নাই।
শুভ বিরক্ত মুখে উঠে চলে গেলো প্রিয়ন্তির বাসার দিকে। প্রিয়ন্তি মাত্র অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। ফ্রেশ হয়ে কফি বানাচ্ছে। কলিং বেল বাজতেই দেখে দরজার ওপাশে শুভ । প্রিয়ন্তি দরজা খুলে ইশারায় ভেতরে আসতে বলল। হাসি মুখে বলল-
– তুমি বস, আমি কফি নিয়ে আসি।
প্রিয়ন্তি কিছুক্ষণের মধ্যেই কফি নিয়ে এলো। চোখে হালকা কাজল দিয়েছে। তার মায়াবী চেহারা কাজল চোখে দিলে অপার্থিব মায়া এনে উপস্থিত করে। সে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো –
– মন খারাপ কেন শুভ ?
– মন খারাপ না।
– আমাকে মিথ্যা বলবে না।
– মিথ্যা বলছি না।
– শুন, ছেলেরা যে বয়সে মিথ্যা বলা শেখে, মেয়েরা সে বয়সে মিথ্যা কথা ধরে ফেলতে শেখে। ঝটপট বলে ফেলো কি হয়েছে?
শুভ, প্রিয়ন্তির হাত চেপে ধরল। মাথা নিচু করে বলল-
– ইশার সঙে ব্রেক আপ করে দিয়েছি ফাইনালি।
– সেকি! কেন?
– যে মেয়ে বুঝে না যে দুঃখের আবেগে যেমন চোখে পানি আসে, অতি সুখের আবেগেও পানি আসতে পারে তার সাথে আর যাই হোক প্রেম চলে না। প্রিয়ন্তি কি বলবে বুঝতে পারছে না। হতভম্ব চোখে সে শুভর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ছেলেটা তার কাছে অভিযোগ করছে নাকি এসব কথার মাঝে আরও অন্য কিছু বুঝাতে চাইছে। ছেলেটার চোখে মুখে প্রেম খেলা করছে প্রিয়ন্তির জন্য, কি সাংঘাতিক! প্রিয়ন্তি হুট করে উঠে দাঁড়ালো, কঠিন কণ্ঠে বলল –
– তুমি আর এখানে এসো না শুভ । তুমি ভালো থেকো।