ক্যারোলের বয়স তখন মাত্র নয়। তারা ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়াগোর বাসিন্দা। ছোট্ট সেই বয়স থেকেই সান্তা ফে রেলওয়ে স্টেশনটি ছিল তার খুব পছন্দের জায়গা।
বড় হওয়ার সাথে সাথে সেই ভাল লাগা গভীর হয়। সেই ভাল লাগা এখন ভালবাসা। ভালবাসার বয়স ৩৬ বছর। আর ক্যারোল সান্তা ফে’র বয়স এখ ৪৫। রোজ ৪৫ মিনিট সাইকেল চালিয়ে তিনি স্টেশনে যান।
তিনি দাবী করেছেন, সান্তা ফে রেল স্টেশনের সাথে স্রেফ তার ভালবাসার সম্পর্ক নয়, জায়গাটাকে রীতিমত বিয়ে করে ফেলেছেন তিনি। না, ভুল শুনছেন না, ক্যারোল সত্যি এমন দাবী করেছেন।
যদিও, এই বিয়ের কোনো আইনগত দলিল নেই। বিয়ের পর পদবী রেখেছেন স্বামীর নামেই। স্টেশনের দুটি দেয়ালের সংযোগস্থলে নাকি তাদের মধুচন্দ্রিমাও হয়ে গেছে। ক্যারোল জানান, ২০১৫ সালে তারা বিয়ে করেন। গত বছর বড় দিনে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের এক বছর পূর্ণ হয়।
ক্যারোল বলেন, ‘মাত্র নয় বছর বয়সেই আমার এই স্টেশনকে ভাল লেগে যায়। ছোটবেলায় যখন এই স্টেশনের দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াতাম, তখনই মনে হত ও যেন আমার অভিভাবক, প্রকৃত বন্ধু।’
শুনতে ভুতুড়ে মনে হলেও এমন ঘটনার এটাই প্রথম নজীর নয়। জড় বস্তুর প্রতি এমন ভালবাসার বৈজ্ঞানিক একটা যৃৎসই নামও আছে – অবজেক্টোফিলিয়া। কেউ কেউ একে বলেন ‘অবজেক্ট সেক্সুয়ালিটি’। অবজেক্টোফিলিয়ায় আক্রান্তরা কোনো বিশেষ জড় পদার্থের প্রতি মানসিক আকর্ষণবোধ করেন। কখনো কখনো সেই আকর্ষণটা শারীরিক সম্পর্কেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা এটাকে একধরণের অটিজম কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীনতা বলে দাবী করেন। এমন আরো অনেক নজীর গোটা বিশ্বের ইতিহাসে পাওয়া যায়। চলুন এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটা ঘটনা জেনে নেওয়া যাক।
এরিকা আইফেল
২০০৭ সালে এরিকা আইফেল নামের এক আমেরিকান নারী দাবী করেন, তিনি আইফেল টাওয়ারকে বিয়ে করেছেন। তিন বছরের প্রেমের মধুর সমাপ্তি হয়। তাকে নিয়ে ‘ম্যারিড টু আইফেল টাওয়ার’ নামের বিখ্যাত ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়। যদিও, একটা সময় খোদ আইফেল টাওয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের এই ‘অবাধ মেলামেশা’য় বাধা দেয়। বিচ্ছেদে শেষ হয় এই অমর প্রেম কাহিনী।
এইজা-রিট্ট বার্লিনার
এইজা-রিট্টা বার্লিনার নামের আরেক নারী ছিলেন যিনি ১৯৭৯ সালে বার্লিন প্রাচীরকে বিয়ে করেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘বার্লিন প্রাচীরই কেন? চীনের গ্রেট ওয়াল নয় কেন?
জবাবে তিনি বলেন, ‘চীনের গ্রেট ওয়াল একটু বেশিই মোটা। আমার স্বামী ওর চেয়ে ঢের আকর্ষণীয়!’
বিল রিফকা
বিল রিফকা ছিলেন সাইকোলজির শিক্ষার্থী। ২০০৭ সালে তিনি লক্ষ্য করেন ল্যাপটপ-কম্পিউটারের প্রতি তিনি আকর্ষণ বোধ করছেন। তবে, ব্যক্তিগত কম্পিউটার বাদেও ই-বে, অ্যামাজন স্টোরের আকর্ষণীয় ল্যাপটপ গুলোর সাথেও ‘ফ্লার্ট’ করতেন তিনি।
লি জিন-গুই
এই জাপানি ভদ্রলোকে বালিশের প্রেমে পড়েছিলেন। সেটা আবার যেন তেন বালিশ নয়, ‘ডাকিমাকুরা’ নামের বিশেষ এক বালিশ যার শরীরে জনপ্রিয় কিছু অ্যানিম চরিত্রের ছবি আঁকা থাকে। আর এই বালিশ হচ্ছে জড়িয়ে ধরার বালিশ, অনেকটা আমাদের কোল বালিশের মত। রীতিমত স্থানীয় পুরোহিত ডেকে তারা বিয়েও করেছিলেন।
এডওয়ার্ড স্মিথ
২০১৪ সালে পত্রপত্রিকায় লেখালিখি হয়েছিল এই আমেরিকান এক হাজারটি গাড়ির সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। কীভাবে? – এই প্রশ্নের জবাব কেউ দেয়নি যদিও। ৬৩ বছর বয়সী স্মিথ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি অসুস্থ নয়, কাউকে আমি আঘাতও করতে চাই না। আসলে গাড়ি আমার খুবই পছন্দের!’
– এমটিভি.কো.ইউকে ও মেট্রো.কো.ইউকে অবলম্বনে